সিলেট-সুনামগঞ্জসহ হাওর এলাকায় আর কোন সড়ক হবে না

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
খাদ্যদ্রব্যের অবৈধ মজুদে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২২’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। এছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলগুলোতে আর কোন সড়ক, রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। প্রয়োজনে এলিভেটেড পদ্ধতিতে এগুলো নির্মাণ করা হবে। সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে এই অনুমোদন ও সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, খসড়াটি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। দুটো আইন একসঙ্গে করে নতুন আইনটি আনা হয়েছে। সামরিক শাসনমালে জারি করা অধ্যাদেশগুলোর বিষয়ে মন্ত্রীসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্য ফুড গ্রেইন সাপ্লাই প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল এ্যাকটিভিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৯’ এবং ‘ফুড স্পেশাল কোর্ট এ্যাক্ট, ১৯৫৬’ দুটো আইনকে একসঙ্গে করে নতুন আইন করা হচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ করা যায়, যাতে সিস্টেমের মধ্যে আনা যায়- সেজন্য আইনটি করা হচ্ছে। মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, এর মাধ্যমে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে না, বাজারে মান যাতে নিশ্চিত থাকে। কেউ যাতে অনৈতিক কাজ করতে না পারে, ক্রেতারা যাতে ঠকে না যায়। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে কোন অপরাধ যাতে না হয় সেগুলো প্রতিরোধ করা করার জন্য এই আইনটি আনা হয়েছে।
‘খসড়া আইনে কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। কেউ যদি এই আইনের অধীনে অপরাধ করে তবে তার সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। মন্ত্রীসভা বলে দিয়েছে, নিরাপদ খাদ্য আদালতই এগুলো দেখবে, আলাদা কোন আদালত লাগবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টেও বিচার করতে পারবে, যে জুরিসডিকশন ওই পর্যন্ত শাস্তি দিতে পারবে।’
তিনি বলেন, আরেকটি সুন্দর জিনিস করা হয়েছে, কোন খাদ্যদ্রব্য যদি জব্দ করা হয়, সেই খাদ্য যদি পচনশীল হয়, তবে সেই খাদ্যদ্রব্য নিলাম ডেকে বিক্রি করে শুধু স্যাম্পল হিসেবে অল্প একটু রাখা যাবে। খাদ্যপণ্য যদি পচনশীল নাও হয় তবেও ৪৫ দিনের মধ্যে নিলাম করে দিতে হবে, টাকাটা কোর্টের কাছে থাকবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি যদি খালাস পান তবে টাকাটা তিনি পেয়ে যাবেন। আর দণ্ড পেলে আদালত যেভাবে আদেশ দেবে সেভাবে হবে।
আইনের অধীনে বিভিন্ন অপরাধ তুলে ধরে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ক্ষতিকর কিছু মিশিয়ে উৎপাদন করা, নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মজুদ করা, সরকারী কর্মসূচীর নামাঙ্কিত বা বিতরণকৃত এমন চিহ্ন যুক্ত ছাড়া সরকারী খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যশস্য ভর্তি বস্তা গ্রহণ, স্থানান্তত করা, হাত বদল বা পুনরায় বিক্রি করাও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, সরকারী কোন কর্মসূচীর আওতায় নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম বিতরণ করা, সরকারী খাদ্য সামগ্র বিক্রি বা বিতরণের জন্য বিএসটিআই নির্ধারিত বাটখানা বা মাপ ব্যবহার না করে হেরফের করলেও শস্তি পেতে হবে।
হাওর এলাকায় আর কোন সড়ক নির্মাণ হবে না : সিলেট-সুনামগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলগুলোতে আর কোন সড়ক, রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। প্রয়োজনে এলিভেটেড পদ্ধতিতে এগুলো নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রীপরিসদ সচিব বলেন, এবার হাওরে আগাম বন্যায় প্রায় ৫ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। আগাম জাতের ধানের বীজ উদ্ভাবন করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেসব বাঁধ ভেঙ্গে গেছে সেসব স্থানে সেতু নির্মাণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮৯ শতাংশ : বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে (২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত) মন্ত্রীসভার বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮৯ শতাংশ। সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রীসভার মোট ৮৯টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ২৫টি, ২০২০ সালে ৩৫টি, ২০২১ সালে ২২টি এবং ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৭টি। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মন্ত্রীসভার এসব বৈঠকে ৭৪৮টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৬৬টি। যা শতকরা হিসেবে ৮৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। এছাড়া ৮২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যা শতকরা হিসেবে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ২৫৮টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ২৫২টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে ৬টি সিদ্ধান্ত। ২০২০ সালে নেয়া হয়েছিল ২৫১টি সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে ২৩৭টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ১৪টি সিদ্ধান্ত।
২০২১ সালে নেয়া ১৮০টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ১৪১টি বাস্তবায়ন এবং ৩৯টি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩ মাসে মন্ত্রীসভা বৈঠকে নেয়া ৫৯টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৩৬টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ২৩টি সিদ্ধান্ত। এ সময়ের মধ্যে ৮১টি আইন এবং ৫টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে অনুমোদনের পর প্রক্রিয়াধীন আইনের সংখ্যা ৫২টি। চলতি মেয়াদে ২৮টি নীতি/নীতিমালা/ কর্মকৌশল/কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন, ৪০টি দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি/প্রটোকল অনুমোদন/ অনুসমর্থন করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে মন্ত্রীসভার জন্য উপস্থাপিত সারসংক্ষেপের সংখ্যা ৫২৬টি।