স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে নিহত যুবক রায়হান আহমদ হত্যা মামলার দীর্ঘ দেড় বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ মো. আব্দুর রহিমের আদালতে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরসহ (বরখাস্ত) ৬ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের (চার্জ গঠন) মধ্য দিয় এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগামী ১০ মে স্বাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য্য করেছেন আদালত।
চার্জ গঠনে অভিযুক্তরা হচ্ছে, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টু আইসি পদে থাকা মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহ আল নোমান। বর্তমানে সব আসামী সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকলেও নোমান পলাতক রয়েছে।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য ছিলো। তবে আসামিদের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশন দাখিল করায় ওই দিন চার্জ গঠন হয়নি। পরবর্তী দিন গতকাল ১৮ এপ্রিল ডিসচার্জ পিটিশনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন মহানগর দায়রা জজ মো. আব্দুর রহিম।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম.এ ফজল চৌধুরী বলেন, সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এস.আই (বরখাস্তকৃত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে। দুপুর ১২টার দিকে বিচারক মো. আব্দুর রহিমের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। এসময় আসামিদের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশনের (খারিজ আবেদন) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞ বিচারক এসময় পিটিশন নামঞ্জুর করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। তিনি বলেন, ৬ জন আসামির মধ্যে ৪ জনের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশন (খারিজ আবেদন) দেওয়া হয়েছিলো আদালতে। সেটি নামঞ্জুর হয়েছে। আগামী ১০ মে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য্য করেছেন আদালত। ওই দিন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা বেগমসহ আরও দু-একজন সাক্ষ্য দেবেন।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতন করে পুলিশ। ১১ অক্টোবর সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৪ জনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেফতার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টু আইসি পদে থাকা মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত ৬ জন আসামির মধ্যে ৫ পুলিশ সদস্য কারাবন্দী। অভিরযাগপত্রভুক্ত ৬ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার নথি পর্যালােচনা শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয় এবং একমাত্র পলাতক আসামি নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি হয়। পরে তার মালামাল ক্রোক ও সর্বশেষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর ১২ এপ্রিল চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। তবে আসামিদের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশনের (খারিজ আবেদন) জন্য চার্জ গঠনের তারিখ গড়ায় গতকাল পর্যন্ত।
ছেলে খুন হওয়ার দীর্ঘ দেড় বছরে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রায়হানের মা সালমা আক্তার। তবে একটু দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেনে তিনি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন রায়হানের মা।