দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস

8

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করোনার বিপর্যয় খুব একটা স্পর্শ করতে পারেনি। বিশ্ব বাজারে মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছুটা শ্লথ গতি থাকলেও অল্প সময়েই তা কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে রেমিটেন্স প্রবাহ। পোশাক খাতের পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও চাঙ্গা। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে রেকর্ড পরিমাণ ক্রয়াদেশ এসেছে। অনেক অর্ডারই দেশের আর্থিক লাভের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল করবে দেশের ভাবমূর্তি।
এবার বিশ্বকাপ ফুটবলের অফিসিয়াল টি-শার্টের অর্ডার পেয়েছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান। ফিফার অফিসিয়াল এবং কর্মীরা এবার ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা টি-শার্ট পরে ঘুরবেন সব ভেন্যুতে। পরবেন ফুটবল অনুরাগীরাও। ফিফার ৬ লাখ অফিসিয়াল টি-শার্ট তৈরির অর্ডার পেয়েছে চটগ্রামের সনেট টেক্সটাইল। ইতোমধ্যে চলে গেছে একটি চালানও। একইভাবে নারায়ণগঞ্জের এ্যাপারেলস স্পেনের একটি বাস্কেটবল দলের অফিসিয়াল জার্সির ক্রয়াদেশ পেয়েছে। বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদিত জার্সির কাপড়ও পছন্দ করেছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। এখন আমদানি করা কাপড়ের পরিবর্তে দেশীয় কাপড়েই এসব জার্সি তৈরি করে রফতানি করা হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় আরও বাড়বে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইভেন্টগুলোতে এতদিন এসব সামগ্রী রফতানিতে একচেটিয়া ছিল চীন। সম্প্রতি চীনে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় নতুন করে লকডাউনের কারণে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে আসছে। ক্রয়াদেশ সরে আসছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া থেকেও। প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং তীব্র জ্বালানি সঙ্কটের কারণে পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতারা ভিড় করছেন বাংলাদেশে।
তৈরি পোশাক ও নিট কারখানার উদ্যোক্তারা বলেছেন, এখন এত ক্রয়াদেশ আসছে যে তারা কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক মালিক সাবকনট্রাক্টেও কাজ করাচ্ছেন। দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি থাকায় অনেক কারখানা চলছে দুই শিফটে। আগামী ছয় মাস তারা নতুন ক্রয়াদেশ নিতে পারছেন না। জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। যারা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করেছেন, তাদের জন্য এই তথ্যগুলো জানা খুব জরুরী। বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে যারা চিন্তিত তাদের জানা উচিত, এসব কর্মকা-ই বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। আস্থা বাড়ছে দেশীয় রফতানিকারকদের প্রতি। বিশ্বমন্দার বাজারেও এ কারণে বাড়ছে রফতানির পরিমাণ। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক মন্দাবস্থা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি থাকবে ভাল অবস্থানেই।