কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাত পোহালেই নতুন বছরের সূর্য উঠবে বাংলার আকাশে। মহামারী কাটিয়ে নব জীবনকে বরণ করে নেবে বাঙালি। বৃহস্পতিবার বাঙালির প্রাণের উৎসব- পহেলা বৈশাখ। এদিন বরণ করে নেয়া হবে বাংলার নতুন বছরকে। মহামারী করোনার কারণে গত দুই বছর ছিল না কোন উদযাপন। করোনার দাপট কমে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে দেশের মানুষের জীবনযাপন। আর তাই জোরেশোরে চলছে আয়োজন। উৎসবের কেনাকাটার ধুম পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণী বিতানে। রমজান মাসের পবিত্রতা বজায় রেখে পছন্দের কেনাকাটায় মেতেছেন নগরবাসী। ভিড় বেড়েছে রাজধানীর পার্লারগুলোতেও। বেশিরভাগ এলাকার পার্লারেই সৌন্দর্যপিয়াসীদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মীরা। মাটির কানের দুল, গলার মালা কিনতে কসমেটিকসের দোকানেও ভিড় বেড়েছে তরুণীদের।
সরেজমিনে বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে এগুলোতে। বাদ যাচ্ছে না ফুটপাথের ভাসমান দোকানও। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই জমজমাট হয়ে উঠছে উৎসবের কেনাকাটা। মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বাংলার নববর্ষ ও আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বেশিরভাগ মার্কেটে এখনও ঈদের কেনাকাটা না জমলেও প্রতিদিনই বাড়ছে পহেলা বৈশাখের পণ্যের চাহিদা। অন্যান্য বছর পহেলা বৈশাখে লাল-সাদার মিশেলে শাড়ির চাহিদা বেশি থাকলেও এবার ক্রেতারা অন্য রঙের শাড়িও কিনছেন জানিয়ে বিক্রেতা সুভাষ দাস বলেন, এখন যারা মার্কেটে আসছেন সবাই পহেলা বৈশাখের শাড়ি কিনছেন। এবার সবুজ, হলুদ, নীল রঙের শাড়িও কিনছেন নারীরা।
বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে তরুণীদের নিজ নিজ সাজকে আরও সুন্দর ও জমকালো করার জন্য বৈশাখী পোশাকের পাশাপাশি কাঁচের চুড়ি ও মালার কদর বেড়েছে।
কেউ কেউ একেবারে ভিন্ন রঙের পোশাক পরে কপালের টিপ, হাতের চুড়িতে রাখতে চাচ্ছেন লাল রঙের প্রাধান্য। কিংবা খোঁপায় সাদা ফুল পরেই বৈশাখী সাজটিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবেন। পছন্দমতো কাঁচের চুড়ি কিনতে আসা কলেজছাত্রী জয়ীতা বলেন, কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি কিনেছি বসুন্ধরা সিটি থেকে। কিন্তু ওখানে পছন্দমতো কাঁচের চুড়ি পাইনি। টিপও কেনা হয়নি। তাই এখানে বাকি কেনাকাটা করতে এসেছি। পাশেই থাকা স্বর্ণালি বলেন, এবারই প্রথম মঙ্গলশোভাযাত্রা দেখব। তাই আমি খুব উদ্বেলিত। লাল রঙের শাড়ি পরব। আর খোঁপায় দেব সাদা ফুলের মালা।
মূলত চলতি সপ্তাহের শুরু অর্থাৎ শনিবার থেকেই পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয় পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা। এর আগে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মানুষজন শপিংমলমুখী হলেও এবারের সব ক্রেতাই বৈশাখের সাজ কিনছেন জানিয়ে কসমেটিকস ব্যবসায়ী সানোয়ার রহমান বলেন, সকাল ৯টার সময় দোকান খুলি। ওই সময় ক্রেতার এত চাপ না থাকলেও ১২ টার পর থেকে চাপ বাড়তে থাকে। ইফতারের সময় আবার কিছুটা সময় হালকা থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উৎসবের ক্রেতাদের উপস্থিতি উৎসবের রূপ নেয় এখানেই।
এদিকের শাড়ির সঙ্গে মানানসই মাটির গহনা কিনছেন অনেক তরুণী। নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট ছাড়া অনলাইনে থেকে শাড়ির সঙ্গে মানানসই অর্ডার দিয়েও গহনা নিয়ে আসছেন তারা। এদের বেশিরভাগই টেপা পুতুলের মুখ দিয়ে তৈরি মালা ও কানের দুল, পেঁচার আদলে তৈরি লকেট, বিভিন্ন ধরনের মুখোশের প্রতিচ্ছবি দিয়ে বানানো গয়নার চাহিদা বেশি জানিয়ে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী রফিক বলেন, দুই সপ্তাহ আগে দোকানে পণ্য তুলেছি। পহেলা বৈশাখের আরও দুদিন বাকি। এরই মধ্যে স্টক শেষ। নতুন করে আবার অর্ডার দিয়েছি চাহিদা বেশি দেখে।
নিজেকে সাজিয়ে নিতে পার্লারগুলোতেও বাড়ছে নারীদের ভিড়। পার্লারের কর্মী বাবলি সাংমা বলেন, আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাস্টমার থাকত না বললেই চলে। কিন্তু পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে অনেক মানুষ আসছেন। তাদের বেশিরভাগই এখন মেনিকিউর, পেডিকিউর, মুখ ম্যাসজা, বিভিন্ন রকমের ফেসিয়াল, হেয়ার কাট, ফেয়ার পলিশ করছেন। বৈশাখের দিন সকালে শাড়ি পরতে আসবেন বলে আগে থেকেই অনেকে বায়নাও দিয়ে গেছেনÑ জানান, নাজ বিউটি পার্লারের স্বত্ত্বাধিকারী নাজনিন আক্তার। তিনি বলেন, এখন ফেসিয়াল, মেনিকিউর, পেডিকিউরই বেশি করাচ্ছেন নারীরা।