তাহিরপুরে ফুলপা ও পাহাড়ি ঢল নিয়ে চিন্তিত হাওরবাসী

13
তাহিরপুরের শনির হাওর নান্টুখালি বাঁধের নিচ দিয়ে চুয়ে যাওয়া বন্ধ করতে ব্যস্ত কৃষকরা।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
“একটা গাত বন্ধ করি আর একটা গাত দিয় পানি চুয়ায়, বান্ধের নীচ দিয়া পানি যাইতে যাইতে এক সময় মাডি গইল্যা বান যে কোন সময় ভাইঙ্গা যায় গা। নদীত পানি আওয়ার পর থাইক্যা শনি আওরের নান্টুখালি বান্ধের এই অবস্থা, বান্ধের নীচ দিয় পানি আওর ডুকে। ফুনছি সাব নগর বান্ধের নীচ দিয়াও নাকি পানি চুয়ায়। এই রকম অবস্থা অইলে বান ঠিকাইয় রাখবো কিভাবে।”
এ রকম আকুতি ভরা কথা শনির হাওর দক্ষিণ পার রাধানগর গ্রামের কৃষক জমির আলী। তিনি জামালগঞ্জ উপজেলার বেহলী ইউনিয়নের কৃষক। শনির হাওরে বোরো জমি রোপন করেছন ৬ কেয়ায়। বাড়ি থেকে কাছেই নান্টুখালি বাঁধ। তাই প্রায়ই হাওরে জরুরী মুহূর্তে বাঁধে কাজ করতে আসেন তিনি। রবিবার সকালেও তিনি শনির হাওর দক্ষিণ পার ঝালখালি, নান্টুখালি বাঁধে কাজ করতে এসেছেন। সে সময় তিনি কাজ করতে করতে গ্রামের ভাষায় কথা গুলো বললেন। কৃষক জমির আলীর মতে হাওরে একাধিক বাঁধে পুরনো মাটির নীচে ছোট, ছোট গর্ত দিয়ে চুয়ে চুয়ে হাওরের ভেতর পানি প্রবেশ করে। এতে পানির সাথে মাটি গলে বাঁধ দুর্বল হয় এবং এক সময় হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে যায়।
২০১৭ সালেও শনির হাওরের নান্টুখালি বাঁধটি একই কারণে ভেঙ্গে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা প্রশাসন বাঁধটিতে বালু ভর্তি বাল্কহেড ছেড়ে দিয়েও বাঁধটি আর রক্ষা করতে পারে নি।
একই অবস্থা দেখা দিয়েছে এবারও। বাঁধের নীচ দিয়ে মাটি চুয়ে হাওরের ভেতর পানি প্রবেশ করছে। নানটুখালি ও সাহেব নগর বাঁধের নীচ দিয়ে পানি চুয়া বন্ধ করতে প্রতিদিন লোকজন কাজ করছেন। এতে দুদিন পানি চুয়া বন্ধ থাকলে হুট হাট আবার পানি চুয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে কৃষকরা আতঙ্কিত হচ্ছেন ফুলপা নিয়ে। (মাটির নীচ দিয়ে পানি চুয়ানো স্থানীয় ভাষায় ফুলপা বলে)
এই ফুলপা আতঙ্ক রয়েছে বেশ ককেটি হাওরে। এর মধ্যে শনির হাওর ও মাঠিয়ান হাওর অন্যতম। গত সপ্তাহে পাহাড়ি ঢলে নদ নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়া মাটিয়ান হাওরের আনন্দ নগর গ্রাম পাশর্^স্থ পুরনো বাঁধটি একই কারণে ধেবে যায়। (মাটির নীচ দিয়ে পানি চুয়া) পরবর্তীতে স্থানীয় হাওর পারের কৃষক ও উপজেলা প্রশাসন বাঁধটি পুনরায় মেরামত করেন।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, একটি মেঘ বলয় সক্রিয় থাকায় সুনামগঞ্জ, সিলেট সহ মেঘালয়ে প্রচুর পরিমাণ ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে আগামী এক সপ্তাহ। এতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন করো আবারও আগাম বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। একদিকে হাওরের বিভিন্ন বাঁধের নীচ দিয়ে পানি চুয়ানো অপর দিকে পাহাড়ি ঢল এ দু নিয়ে হাওরবাসী মারাত্মক ভাবে চিন্তিত রয়েছে। রাত জেগে হাওরবাসী বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। উৎকন্ঠা যেন পিছু ছাড়ছে না হাওরবাসীর।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, তিনি দীর্ঘ বছর ধরে হাওরের সংকট মুহূর্তে বাঁধে কাজ করে আসছেন। তিনি জানান, শনির হাওরের নান্টুখালি ও সাহেব নগরের পুরনো বাঁধ দুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধের নীচ দিয়ে পানি চুয়ে চুয়ে হাওরে ঢুকছে। এ অবস্থায় তিনি হাওর পারে কৃষকদের নিয়ে দু দিন কাজ করে মাটি ভর্তি অনেক বস্তা বাঁধের উপর মজুত রেখেছেন। কোন কারণে নীচের মাটি সরে যায় তাহলে মাটি ভর্তি বস্তা গুলো কাজে দিবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রায়হান কবির বলেন, বিভিন্ন হাওরের একাধিক পুরনো বাঁধে মাটির নীচ দিয়ে গর্ত ধরে অদৃশ্যভাবে কিছু পানি হাওরের ভেতর প্রবেশ করে। স্থানীয় কৃষকরা এটাকে ফুলপা বলেন। এটা নিয়ে আমরা অনেকটা চিন্তিত রয়েছি। জরুরী মুহূর্তে হাওর পারের কৃষকদের সাথে নিয়ে আমরা বোরো ফষল রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। এবং তাদের এ চেষ্টা বোরো ফসল ঘরে উঠানো পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।