গোয়াইনঘাটে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত হচ্ছে ‘বীর নিবাস’

17

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১০৬টি বাড়ি (বীর নিবাস) তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। এই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।
বীর মুক্তিযোদ্ধােদের নিজস্ব জমিতে নির্মাণ করা হবে ওই বাড়ি গুলি। আর ওইসব বাড়ি গুলির নাম হবে ‘বীর নিবাস’।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে এই বাড়ি গুলির নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলে জানা যায়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে একটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার ১২২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে এসব আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান। বাছাই কমিটিতে আরো রয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় দু’জন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি।
এসব গৃহনির্মাণে যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজ নামে ৪ শতক জমি রয়েছে তাদেরকেই বীর নিবাস নির্মাণে বাছাই করা হয়েছে। নির্ধারিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের স্বচ্ছতা আনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপপ্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গৃহ নির্মাণে গোয়াইনঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা গণের প্রস্তাবিত গৃহের জমি, দাগ-খতিয়ান দেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে সুপারিশ করেছেন। এছাড়া আবেদন যাচাই-বাছাই করে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অ-সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ বরাদ্দ দেয়ার জন্য ১০৬ টি গৃহ নির্মাণ চূড়ান্ত করেছেন।
কেমন হবে ‘বীর নিবাস’ পাকা ১ তলা প্রতিটি বাড়ি হবে ৬৩৫ স্কয়ার ফিটের। এর মধ্যে ২টি প্রধান কক্ষ (বেড রুম), ১টি অতিথি কক্ষ (ড্রয়িং রুম), ১টি খাবার কক্ষ (ডাইনিং-রুম), ১টি রান্না ঘর ও ২টি বাথরুম থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা অসচ্ছল তারাই এসব বাড়ি বরাদ্দ পাবেন। সারাদেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। অসহায় এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতেই দ্বিতীয় পর্যায়ে এ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।
এ আবাসন বরাদ্দের জন্য অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ-প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী ও সন্তান আবেদন করতে পারবেন। বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনটি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শেষে সরাসরি তাদের বিপরীতে আবাসন বরাদ্দ দেবে। সুবিধাভোগীকে বরাদ্দপ্রাপ্ত বাড়িটি শুধু নিজের বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করবেন মর্মে চুক্তিপর্বে অঙ্গীকার করতে করা হয়েছে। এ বাড়িটি কোনভাবেই বিক্রি বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। নির্মিত বাড়িটির মূল অবকাঠামোগত কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা যাবে না।
বাড়িটি সংস্কার, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী নিজ খরচে বহন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান অসহায় এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে গৃহ নির্মাণের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরই প্রেক্ষীতে সরকারি বিধিবিধান মেনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১০৬টি বীর নিবাস নির্মাণের চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে রুস্তুমপুর ইউনিয়নে ১৮টি, পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে ১১টি, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নে ১৭টি, লেঙ্গুড়া ইউনিয়নে ১৫টি, পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নে ১টি, ফতেহপুর ইউনিয়নে ৩টি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়নে ৫টি, তোয়াকুল ইউনিয়নে ৬টি, ডৌবাড়ী ইউনিয়নে ৩টি, পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নে ১২টি, মধ্য জাফলং ইউনিয়নে ১০টি এবং গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নে ৫টি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হবে।
তবে এই ১০৬টিই শেষ না, প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ আসতে পারে। আর বীরাঙ্গনা দের জন্য আলাদা ভাবে বরাদ্দ দেয়া হবে। তারা শুধু আবেদন করলেই হবে। বর্তমানে বীর নিবাস গুলো টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি বলেন, সারাদেশে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিবেদনের আলোকে এই বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে জমির দাগ-খতিয়ান দেখে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের মধ্যে এই বীর নিবাস নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ আরো বলেন প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য ১৪ হাজার পাকা বাড়ি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ হাজার করা হয়েছে। অর্থাৎ বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ তৈরি করে দেয়া হবে।