সুনামগঞ্জের গীতিকার মক্রম আলী শাহের জীবনাবসান

12

 

আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ

দুনিয়া মুসাফির খানা চিরদিন কেউ রবেনা/ভবে আসা যাওয়া বারন হইলো না- গানের জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার ফকির মক্রম আলী শাহ আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শনিবার বিকাল ২টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষনশ্রী ইউনিয়নের বাদুরপুর গ্রামস্থিত ২২ গ্রাম মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ১২ মে শুক্রবার রাত ১০টায় সুনামগঞ্জের মরমী সংস্কৃতি জগতের কিংবদন্তী বাউল শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার ফকির মক্রম আলী শাহ বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়ীতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৮ বছর। তিনি এক পুত্র ও ৪ কন্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী আত্মীয় স্বজন ও ভক্ত আশেকান মুরিদান রেখে গেছেন।
মরহুমের নামাজে জানাজায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামছুল আবেদীন, প্রবাসী গীতিকার দিলাওয়ার রহমান মুজিব, গীতিকার আবুল আজাদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল, জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খলিল রহমান, প্রবীণ বাউল শিল্পী তছকীর আলী, লক্ষনশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ ও কোরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বরকতসহ এলাকার বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মরহুমের জানাযার নামাজে একমাত্র পুত্রের অনুপস্থিতি উপস্থিত মুসল্লিয়ানদেরকে হতাশ করেছে।
উল্লেখ্য ফকির মকরম আলী শাহ ১৩২২ বাংলার বৈশাখ মাসের প্রথম সোমবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষনশ্রী ইউনিয়নের বাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম পীর সফাত আলী শাহ ও মাতার নাম জয়গুণ বিবি। মকরম আলী শাহর পিতা পীর সফাত আলী শাহ উর্দু, ফার্সী ও আরবী ভাষা জানতেন। পড়তে পারতেন সিলেটের নাগরি লিপি। পিতার মতো নাগরি লিপি পড়তে ও এরকম নানা ভাষায় পারদর্শী ফকির মকরম আলী শাহ নিজেও। বাদুরপুরের ইসলামীয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছেন তিনি।
সমবয়সী শিল্পী হওয়ায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের সাথে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তিনি নেত্রকোনা জেলার প্রখ্যাত গীতিকবি জালাল উদ্দিন খার শিষ্য ছিলেন। জীবদ্ধশায় বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ সুনামগঞ্জ, জেলা গীতিকার ফোরাম ও জেলা বাউল সমিতিসহ অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বাউল সাধক ফকির মক্রম শাহ এর হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে শত শত গান এবং যার নামের সাথে মিশে আছে শত শত গানের সুরলোক। তিনি একাধারে রচনা করেছেন বাউল গান, আধ্যাত্মিক গান, পল্লীগান, দেশাত্মবোধক গান ইত্যাদি। তিনি উর্দু, ফার্সি, আরবি, হিন্দি, নাগরী ভাষায় পারদর্শী। তিনি নাগরী ভাষায় অনেক গান রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গীতিগ্রন্থের নাম হচ্ছে ভবে আসা যাওয়া বারন হইলো না। তিনি তার সারাটা জীবন গান ও আধ্যাত্মিক সাধনায় কাটিয়েছেন।