সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ ॥ প্রতারক চক্রের মিথ্যা মামলায় কারাগারে হকার্স মার্কেটের দুই ব্যবসায়ী

11
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন লালদীঘি (পুরাতন) হকার্স মার্কেট দোকান মালিক ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি শেখ মো: কবির আহমদ।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের লালদীঘি হকার্স মার্কেটের দুই ব্যবসায়ীকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে এবং বিনাদোষে বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন লালদীঘি (পুরাতন) হকার্স মার্কেটের দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুস ছোবহান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, মেসার্স হারুন এন্ড সন্স-এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. হেলেম মিয়া ও গোলাম নবী এন্ড সন্স-এর স্বত্ত্বাধিকারী ও সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য খোকন মিয়া একটি প্রতারক ও কুচক্রি মহলের কবলে পড়ে বিনাদোষে কারাগারে চরম অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী মো. হেলেম মিয়ার কাছ থেকে প্রতরণা করে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে উল্টো মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করেন ইব্রাহীম ওরফে মাহলম। মামলায় দুই ব্যবসায়ীকে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী আখ্যায়িত করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে ভয়ঙ্কর এ জালিয়াত চক্র।’
মামলার বাদী টাকা আত্মসাতকারী মো. ইব্রাহীম মিয়ার সাজানো মামলায় আসামি করা হয়েছে মো. খোকন মিয়া, মো. হেলেম মিয়া, মো. ইউনুস মিয়া, মো. আলমগীর, মো. আলামিনসহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনকে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ী মো. হেলেম মিয়া লালদীঘিরপার রোডে একটি দোকান কোঠা ক্রয় করতে চাইলে নরসিংদীর মো. ইব্রাহীম মিয়া তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় কৌশলি ইব্রাহীম ভুয়া দোকানকোঠা দেখিয়ে ৭৭ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দালালদের আরও ৮ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তিসহ মোট ৮৫ লাখ টাকা মূল্য সাব্যস্ত করেন। সে অনুযায়ী বায়না বাবদ মো. ইব্রাহীম মিয়াকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন মো. হেলেম মিয়া। যার মধ্যে ৫ লাখ টাকা প্রিমিয়ার ব্যাংক, লালদীঘিরপার শাখার চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন। পরবর্তীতে ইব্রাহীম মিয়া এ টাকা নিজে উত্তোলন করেন।
তিনি বলেন, মো. হেলেম মিয়া বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন, ভুয়া বায়নাপত্র সম্পাদন করেছেন। তখন তাকে দোকানকোঠা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে ইব্রাহীম বায়নাকৃত ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সময়মতো টাকা ফেরত না দিয়ে মো. ইব্রাহীম মিয়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে হেলেম মিয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির একটি সাজানো অভিযোগ দায়ের করেন।’ পরবর্তীতে মো. হেলেম মিয়া প্রকৃত অবস্থা ব্যখ্যা করে লিখিতভাবে কাউন্সিলরের কাছে একটি অভিযোগ জমা দেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ জানুয়ারি কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিমের অফিসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি সুরাহা হওয়ার আগেই ইব্রাহীম মিয়া বিচার প্রত্যাহার করে নেন এবং এরই ফাঁকে হেলেম মিয়াসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন।’ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মো. হেলেম মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী গোলাম নবী এন্ড সন্স-এর স্বত্ত্বাধিকারী খোকন মিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘মো. হেলেম মিয়া আমাদের সমিতির কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন। তাই আমাদের একজন ব্যবসায়ী ভাইয়ের বিপদের মুহূর্তে তার পাশে দাঁড়িয়েছি। ইব্রাহিম মিয়া একজন প্রতারক ও অসৎ ব্যক্তি। এই চক্র অনেক ব্যবসায়ীর সাথে এ রকম প্রতারণা করেছে। মো. হেলেম মিয়ার বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে সমিতিরি পক্ষ থেকে বারবার মো. ইব্রাহীম মিয়াকে আহবান জানানো হলেও তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেননি। বিষয়টি আমরা সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ ও সিলেট মহানগর ঐক্য কল্যাণ পরিষদকে অবগত করেছি।’ ব্যবসায়ী হেলেম মিয়ার ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ফেরত ও প্রতারকচক্রের বিচার দাবি করেছেন হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি শেখ মো. কবির আহমদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী সমছু মিয়া, সহ-সভাপতি হাজী দেলওয়ার মিয়া, দপ্তর সম্পাদক মো. শাহজাহান আহমদ, কার্যকরী সদস্য মো. হেলাল আহমদ, মো. মুছা আহমদ চৌধুরী ও কাওছার আহমদ, ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জুম্মান, আব্দুল জলিল, মো. সামছুদ্দিন মেম্বার ও মো. গোলাম হাক্কানী সুমন প্রমুখ।