শিপন আহমদ, ওসমানীনগর
অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ী ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতিমধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাওর বেষ্টিত এলাকায় অব্যাহত ডুকছে পানি। ফলে ৪টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর পানিবন্দি রয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে রাস্থাঘাট সহ কয়েকটি মাছের ফিসারী। অব্যাহত পানি বৃদ্ধি আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, শনিবার রাতে প্রায় তিনঘন্টা টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় ৫শতাধিক পরিবার। এর আগে গত এক সাপ্তাহ ধরে অব্যাহত বাড়ছে কুশিয়ারার পানি।
নিম্নাঞ্চলীয় এলাকায়ও পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৪টি ইউনিয়ন। ফলে স্থানীয় জনগণের মাঝে আতঙ্ক এবং দুশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। রবিবার সকাল থেকে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধীরে-ধীরে হাওর বাওরে ডুকছে পানি। উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের বানাইয়ার হাওর ও উসমানপুর ইউনিয়নের রউয়ার হাওর, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের কালাসারা হাওরে পানি বাড়তে থাকায় নিম্নাঞ্চলের প্রায় শতাধিক গ্রামীন রাস্থা ঘাট তলিয়ে গেছে পানিতে। একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারিন্দা ছুই-ছুই পানি। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কুশিয়ারার ডাইক পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমা দাসসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুমসহ খোলা হয়েছে ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র।
উপজেলার সিমান্তবর্তী উমরপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর, আব্দুল্লাহপুর, হামতনপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আব্দুল্লাহপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ফসলের জমি পানির নিচে। ঘরের চারপাশে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য। নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আরো ১ ফুট পানি বৃদ্ধি পেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার উপক্রম হবে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানাস্তর হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সরকারি ভাবে কোন সহায়তা না মিললেও আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে খাদ্যসহায়তা প্রধান করা হবে।
এছাড়া, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী সাদিপুর ইউনিয়নরে গজিয়া, ইব্রিরাহিমপুর, লামা তাজপুর, খছরুপুর, মীরপুরসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে ইউনিয়নের পাকা ও কাঁচা প্রায় অর্ধশতাধিক রাস্তা। বিষয়টি নিশ্চত করে সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেদ আহমদ মূছা বলেন, বেশ কিছু বাড়ির উঠানে পানি উঠেগেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে স্থানীয়দের। এদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে উসমানপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ইউনিয়নের প্রায় ১৭টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যে, মঈনপুর, মুমিনপুর, মিরপুর, ধনপুর, ভাইয়া, লতিবপুর, বাজিদপুর, ঘরপুর, রাঙ্গাপুর, কবুলপুরের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্ধি রয়েছেন। ডুবে গেছে প্রায় অর্ধশত রাস্থা।
উসমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উয়ালী উল্যাহ বদরুল বলেন, আমি নৌকা নিয়ে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। ঘরে পানি ডুকায় প্রায় ১৫টি পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে, খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন।
এদিকে, উপজেলার পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের প্রায় আরো ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তার মধ্যে জাকিরপুর, কোনাপাড়া, গলমু খাপন গ্রামের একাংশ, মশাখলা, বকশিপুর, চাঁনপুর, দৌলতপুর, ভল্লবপুর গ্রামের প্রায় ৭০টি পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। এছাড়া প্রায় ১২টি পাকা রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী চৌধুরী সুমন। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরকারি ভাবে ইউনিয়নের ১০টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সরকারি সহায়তার বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমা দাসের সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।