স্পোর্টস ডেস্ক :
সময় এক নিষ্ঠুর এবং রহস্যময় সত্য। সময় নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে। কেউ বলেন- মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামোর একটি অংশ, যেটি একটি বিশেষ মাত্রা এবং যেখানে ভৌত ঘটনাসমূহ একটি ক্রমধারায় ঘটে। এটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি যা আইজ্যাক নিউটনের তত্ত্বসম্মত। এই মতানুসারে সময় একটি ভৌত রাশি যা পরিমাপযোগ্য।
এত ভারি কথা বলে পাঠকদের মাথা গরম করতে চাই না। সরলভাবেই বলি, যুদ্ধের ময়দানে যখন দুইপক্ষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় তখন কখনও কখনও অতীত-সময় টেনে আনে। তখন অনেক কিছুই সামনে চলে আসে। এই যেমন সময়ের পরিক্রমায় একই আসরে একই প্রতিপক্ষ আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। যাতে করে বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে খুবই কৌতুহলোদ্দীপক। বিষয়টি খোলাসা করা যাক। তার আগে ‘টাইম মেশিনে’ করে পিছিয়ে যাওয়া যাক ২০ বছর আগে। সময় : ৮ জুলাই, ১৯৯৮। স্থান : ফ্রান্সের সেইন্ট-দেনিসের স্তাঁদে দ্য ফ্রান্স। উপলক্ষ : ফিফা বিশ্বকাপের ষোড়শ আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ফ্রান্স এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে আসা ক্রোয়েশিয়া। ওই ম্যাচে আগে গোল করে এগিয়ে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২-১ গোলে হেরে যায় ‘দ্য ব্লেজার্স’ খ্যাত ক্রোয়েটরা। পরে ব্রাজিলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নেয় ‘লেস ব্লিউস’ খ্যাত ফ্রান্স।
মজার ব্যাপার- সময় আবারও এই দুই দলকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক বিন্দুতে। ফিরে আসা যাক বর্তমানে। সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮। স্থান : রাশিয়ার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম। উপলক্ষ : ফিফা বিশ্বকাপের একবিংশ আসরের ফাইনাল। প্রতিপক্ষ তৃতীয়বারের মতো ফাইনালিস্ট ফ্রান্স এবং প্রথমবারের মতো ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া।
১৯৯৮ আসরে জিনেদিন জিদানদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন ডেভর সুকাররা। ২০১৮ আসরেও কী একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? এবার কী এ্যান্টোনি গ্রিজম্যান-কিলিয়ান এমবাপেদের কাছে হার মানবেন লুকা মডিরিচ-ইভান রাকিটিচরা? সেটা জানার উপায় আপাতত নেই অপেক্ষা করা ছাড়া। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই জেনে রাখুন ক্রোয়েশিয়া মাঠে নামবে ২০ বছর আগের অতীত-ইতিহাস জেনেই। প্রতিশোধের নেশায় টগবগ করে ফুটছে তারা। তাই বলে ফরাসী শিবিরও যে হাত গুটিয়ে বসে থেকে ছেড়ে দেবে হাল এমনটা ভাবারও কোন কারণ নেই। তারাও সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে দ্বিতীয়বারের মতো সোনার ট্রফিটা নিজেদের করে নিতে।
আরেকটি মজার ব্যাপার না বললেই নয়। এই বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রতিনিধিত্ব করছে আর্জেন্টিনা গ্রুপের দুই দল। আর্জেন্টিনাকে যে দুই দল হারিয়েছে, সেই ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়াই এখন ফাইনালে। ‘ডি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ছিল ক্রোয়েশিয়া। মেসির আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ক্রোয়েটরা। আর দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে তাদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় ফ্রান্স।
আরও মজার ব্যাপার আছে। এবারের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারায় ক্রোয়েশিয়া। কাকতালীয় ব্যাপার- ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচের ১০৯ মিনিটে যিনি জয়সূচক গোলটি করেন সেই ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড মানজুকিচের গোলের ধরন ছিল একদমই জার্মানির এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার গোয়েতজের মতো, যিনি ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে ১১৩ মিনিটে একই স্টাইলে গোল করেছিলেন ওই আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। বিস্ময়কর ব্যাপার- মানজুকিচের মতো গোয়েতজের নামের প্রথম অংশও হুবহু এক- ‘মারিও’।
চলমান রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছিল পাঁচবার ফাইনাল খেলে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ‘লা আলবিসেলেস্তে’ খ্যাত আর্জেন্টিনা। মেসিদের দলের এই বিদায়ে হতাশায় মুষড়ে পড়েছিলেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আর্জেন্টিনার কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগী। কিন্তু যদি বলা হয়, এই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে আর্জেন্টিনা, তাহলে নিশ্চয়ই চমকে যাবেন। অনেকে হয়তো পাগল ঠাওরাতেও পারেন। ভনিতা না করে রহস্যভেদ করা যাক। আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া। সেই ম্যাচের রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন একজন আর্জেন্টাইন। তার নাম নেস্তর পিতানা।
যদিও প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু পরিসংখ্যান ঘাঁটলে ফ্রান্সের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তারা। দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে (৫বার) একবারও জেতেনি তারা। বরং ফ্রান্সই জিতেছে ৩ বার। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। তবে এবার বদলা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই পরিসংখ্যানের উন্নতি ঘটাতে চায় ক্রোয়েশিয়া। পারবে কী তারা?