আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সভায় শেখ হাসিনার আশাবাদ ॥ দেশ বদলে দিয়েছি, আবারও ভোট দেবে জনগণ

15
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সভায় সভাপতিত্ব করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ বদলের কাজে নেতৃত্ব দেয়ায় আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আশা করি জনগণ আমাদের ভোট দেবে। কারণ একটা দেশকে আমরা বদলে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে।
মঙ্গলবার বিকেলে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সভাপতি মন্ডলীর সভায় সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাস, ভয়াল দুর্নীতির চিত্রও বেশি করে প্রচার করার জন্য দলের নেতাদের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে যেসব জেলা-মহানগর, উপজেলা-পৌর ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এখনও সম্মেলন হয়নি তা দ্রুত শেষ করে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলারও নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নামের তালিকা দেয়া হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সকল সভাপতিম-লীর সদস্যকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য পাঁচটি করে নাম লিখিতভাবে তার কাছে জমা দিতে বলেন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা সিইসি ও কমিশনার পদে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন।
এসব নামের তালিকা থেকে ১০ জনের একটি নামের তালিকা চূড়ান্ত করার ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব দেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দলের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার কমিশনার পদের জন্য যে ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন, সেটি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল সার্চ কমিটিতে জমা দেবেন। এছাড়া বৈঠকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত ৮টি টিমকে পুনরায় নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় গিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হওয়া এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লেঃ কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, এডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে করোনা মহামারী মোকাবেলায় তার সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা বৈঠকে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা সঙ্কটে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আমরা স্থিতিশীল রেখেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার বক্তৃতায় আরও বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আজকে আমরা ক্ষমতায় রয়েছি বলেই মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, আমার বাড়ি আমার খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। দেশের কেউ গৃহহীন থাকবে না, শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সভাপতিমন্ডলীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটি আওয়ামী লীগের কাছে ১০ জনের একটি নামের তালিকা চেয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে উপস্থিত সবার মতামত চান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দলের পক্ষ থেকে কাদের নাম প্রস্তাব করা যায় এ ব্যাপারে প্রত্যেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্যকে ৪-৫ জনের নাম লিখিত আকারে লিখে তার কাছে জমা দিতে বলেন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। এ সময় সভাপতিমন্ডলীর সকল সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে এসব নামের তালিকা থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার ভার প্রধানমন্ত্রীর ওপর অর্পণ করেন।
বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয়েও আলোচনা হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা তাদের মতামত প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, সারাদেশে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে আটটি টিম গঠন করা আছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব টিমকে নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা-মহানগর, উপজেলায় সফরের মাধ্যমে যেখানে এখনও সম্মেলন শেষ করা যায়নি, তা দ্রুত শেষ করে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং যোগ্য-ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গত প্রায় ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-সফলতা ও দেশকে বদলে দেয়ার প্রকৃত চিত্র দেশের মানুষের সামনে ভাল করে তুলে ধরার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশবিরোধী অশুভ তৎপরতা, তাদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা এবং দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করা, পাচারকৃত বিপুল অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশবিরোধী তাদের অপকর্মগুলোও জনগণের সামনে তুলে ধরারও নির্দেশ দেন। কূটনীতিকসহ বিদেশী মহলে যারা কথা বলেন, এ বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ যেসব দুর্বলতা রয়েছে তা দ্রুত নিষ্পন্ন করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণতন্ত্র নিয়ে বিএনপি নানা কথা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কখনও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেনি। ’৯১-৯৬ পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে কোয়ালিশন করে তারা ক্ষমতায় এসে মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি এক তরফা প্রহসনের নির্বাচন করে জনগণের গণআন্দোলনের মুখে তাদের পদত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য হয়। ২০০১ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। কখনও শান্তিপূর্ণভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। তারা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে।
বৈঠকে তিনজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির অপতৎপরতার কথা তুলে ধরেন। সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসতে চায় না কারণ তারা ভাল করেই জানে যে, নির্বাচনের ফলাফল কী হবে। দেশের জনগণ তাদের কেন ভোট দেবে ? দেশের জনগণ আর বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলের মতো অন্ধকারের যুগে যেতে চায় না, যাবেও না। আমরা দেশকে বদলে দিয়েছি, দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে আলো জ্বলছে। গৃহহীনরা বিনামূল্যে নিজস্ব ঠিকানা পাচ্ছে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে আবারও গণরায় দেবেন।
এছাড়া বৈঠকে র‌্যাবের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা হয়। বিএনপিসহ দেশবিরোধী অপশক্তিরা মার্কিন সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে এটা করিয়েছে সেটাও আলোচনা উঠে আসে। বৈঠকে নতুন তিন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এবং এডভোকেট কামরুল ইসলাম তাদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সভার শুরুতেও এই তিন নতুন সভাপতিমন্ডলীর সদস্যকে স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।