কুলাউড়ায় আশ্রয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

50
কুলাউড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও লুটপাটের বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করছে দুদক।

কুলাউড়া থেকে সংবাদাতা :
কুলাউড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ চলমান কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর (২৫ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার তদন্তে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রকাশিত সংবাদের পত্রিকার প্রিন্ট কপি সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগীদের সরজমিন গিয়ে দীর্ঘ সময় ঘরের নানা দিক বিশ্লেষণ করে দুদক টিম। এসময় স্কেল দিয়ে ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ, খুটির উচ্চতা ও দৈর্ঘ্য প্রস্থ মাপ যোগ দেখেন তারা।
দুদক টিমের কাছে অনিয়মের বর্ণনা দেন উপকারভোগীরা। এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ২০ টুকরি বালু মিশিয়ে কাজ করার কথা তুলে ধরেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো অপদস্থ হতে হয়েছে সেই বিষয়টিও দুদক টিমের কাছে তুলে ধরেন পৃথিপাশা ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আহাদ। গণমাধ্যমে ঘরের অনিয়মের কথা তুলে ধরায় আব্দুল আহাদকে হুমকিও দেওয়া বিষয়টিও দুদকের নজরে আনা হয়।
দুদক টিম কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চারটি গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প -২ এর চলমান ঘরের দৃশ্য তদন্ত করে। সুলতানপুরে গ্রামের একটি ঘরের বারান্দা ফেটে চৌচির হয়েছে সেই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেন তারা। কাজে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে কানাইটিকর গ্রামের ছায়া বেগম দুদক টিমের কাছে ঘরের টেকসই নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন- ‘অনেয়ক ভয়ে আছি, ঘরের খুটি খুবি দুর্বল, কোন সময় ঘর বাতাসে নিবো গি’।
কুলাউড়ার চলমান প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ কাজের নেতৃত্বে আছেন কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল লাইছ। প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প্ল্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উপকারভোগীদের।
কুলাউড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প -২ এর আওতায় প্রায় ৩শ বাড়ি নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। দুদকের সহকারি পরিচালক মো. এরশাদ মিয়ার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল দিনভর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্মিত ঘর পরিদর্শণ করেন।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প -২ এর আওতায় (যাদের জায়গা আছে বাড়ি নাই) কুলাউড়া উপজেলায় প্রায় ৩শ বাড়ি নির্মাণ করা হয়। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল লাইছ কোন নীতিমালা অনুসরণ না করে পছন্দসই ঠিকাদার দিয়ে বাড়িগুলো নির্মাণ করেন। বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়ে। বিশেষ করে দু’ শতাধিক ঘরের নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হলে নজরে পড়ে দুদকের। তারা বিষয়টি সরেজমিন তদন্তে আসে কুলাউড়ায়।
দুদক হবিগঞ্জ অঞ্চলের ডেপুটি ডাইরেক্টর অজয় সাহা জানান, আমরা সহকারি পরিচালকের নেতৃত্বে তদন্ত করে যাচ্ছি। তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবো। তবে তদন্তাধীন বিষয়ে কোন কথা বলবো না।
এর আগে বুধবার ২৪ এপ্রিল সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে আসলে জয়চন্ডী ইউনিয়নে একটি ঘর পরিদর্শন করেন। স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পরিদর্শণকালে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে উপকারভোগিরা সরাসরি গৃহ নির্মাণে অনিয়মের কথা জানান। এসময় জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম ও ইউএনও মো. আবুল লাইছ উপস্থিত ছিলেন।