সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ মুর্শেদ ও তার বাহিনীর কাছে জিম্মি কাকলী সেন্টারের মালিক-ব্যবসায়ীরা

16

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরের জিন্দাবাজারস্থ কাকলী শপিং সেন্টার জোরপূর্বক দখল এবং মালিক-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করছেন ফজলুল হক মুর্শেদ ও তার বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি স্বাক্ষর জাল করে মার্কেটের দোকানকোঠা ভাড়া ও পজিশন বিক্রয় করছেন তিনি।
সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ সব অভিযোগ করেছেন কাকলী শপিং সেন্টারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুজিবুল হক জাবেদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘ফজলুল হক মুর্শেদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে দোকানকোঠা ভাড়া ও পজিশন বিক্রি করছে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন।’
মো. মুজিবুল হক জাবেদ আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রমাণ পেয়েছি, ফজলুল হক মুর্শেদ গত বছরের ২৬ আগষ্ট নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে আমার চাচার উত্তরাধিকারীগণ ও আমাদের দুই ভাইয়ের স্বাক্ষর জাল করে একটি ভুয়া ও মিথ্যা আমমোক্তারনামা তৈরি করেছে; যার বিরুদ্ধ আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।’
মুর্শেদ কাকলী শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় দুর্ব্যবহার ও নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় একাধিক জিডি করেছেন।
ফজলুল হক মুর্শেদ কাকলী শপিং সেন্টারের ১১ম তলার সিঁড়িকোঠায় নেশাদ্রব্য সেবনের আখড়া তৈরি ও মার্কেটে আগুন লাগিয়েছে বলে অভিযোগ জাবেদের। তিনি বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে রাত দেড়টা পর্যন্ত মার্কেটের ১১ তলার সিঁড়ি কোঠায় মাদকাসক্ত সন্ত্রাসীদের নিয়ে থার্টিফাস্ট পালন করে এবং নেশাদ্রব্য সেবন করে। ফলে ভবনে আগুন লেগে যায়। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায় এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নেশাদ্রব্য সেবনের আলামত পায়।’
‘পরদিন সে তার বাহিনী নিয়ে মার্কেটের সামনে এসে মহড়া দেয় এবং যে সব ব্যবসায়ী তাদেরকে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছে। সে সব ব্যবসায়ীদেরকে প্রাণে মারার হুমকি প্রদান করে।’ এ বিষয়ে হুমকিপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীরা কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করেছেন।
আগুন লাগানোর বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুজিবুল হক জাবেদও মুর্শেদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন। এ কারণে মুর্শেদসহ কয়েকজন তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাবেদ বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন। মামলা করার পর ফজুলল হক মুর্শেদ, তার ভাই এনামুল হক খোরশেদসহ আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি গত ৭ জানুয়ারি জল্লাপার মসজিদের সামনে পেয়ে আমাকে মামলা তুলে নিতে বলে। অন্যথায়, আমাকে অথবা আমার ছেলেমেয়েদের প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয় তারা।’
ব্যবসায়ীদের হয়রানি, হুমকি ও প্রাণে মারার বিষয়ে মুর্শেদের কর্মকান্ড প্রসঙ্গে জাবেদ আরও বলেন, ‘কাজী ইলিয়াস মহল্লার বাসিন্দা কবির আহমদ সিলেটে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কাকলী শপিং সেন্টারের ৭ম তলায় ২০০৯ সাল থেকে তিনি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১১ ও ২০১৫ সালে ভাড়া চুক্তি নবায়ন করেন। মার্কেট ঠিকমত না চলায় আমাদেরকে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য দায় পরিশোধে সবসময় সহযোগিতা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা দায়ের করে। এগুলো সমাধান করতে কবির সাহেবের নিকট থেকে বিপুল অংকের অর্থ ঋণ হিসেবে গ্রহণ করি।’
‘ভাড়া চুক্তি চলমান থাকায় কবির আহমদের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আমার মরহুম চাচা সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজিমুল হক শিরু মিয়া, আমার ভাই শহিদুল হক রাশেদ এবং আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুজিবুল হক জাবেদ ব্যবসায়ী কবির আহমদকে মার্কেটের ৭ম তলার তিনটি দোকানের সমপরিমান ২৪০০ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস, ২টি কার পার্কিং ও এ্যার্পাটমেন্ট বিক্রয় নিয়মে ০.৫৫ পয়েন্ট ভূমি রেজেস্ট্রি বায়না দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিক্রয় চুক্তিনামা দলিল করে ভূমির সরেজমিন স্বত্ব-দখল হস্তান্তর করে দিয়েছি। ঐ দলিলে আমার চাচা কাকলী শপিং সেন্টারের সাবেক চেয়ারম্যান আজিমুল হক শিরু মিয়ার পুত্র মো. এমদাদুল হক উবেদ (বর্তমান চেয়ারম্যান) ও এনামুল হক খোর্শেদ স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।’
অথচ কবির আহমদকে তার অংশ রেজেস্ট্রি করে না দেওয়ার জন্য এবং উচ্ছেদ করার জন্য ফজুলল হক মুর্শেদ তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডিসহ একাধিক জায়গায় দরখাস্ত করেছেন। এ বিষয়ে জাবেদ বলেন, ‘আমি আশা করি প্রশাসনের তদন্তে সবকিছু স্পষ্ট হবে। আমরা কবির আহমদের কাছ থেকে বর্ণিত দোকানকোঠা বিক্রয়ের মোট ৩৮ লাখ টাকা গ্রহণ করার পরও অতিরিক্ত ২৩ লাখ টাকা মার্কেটের বিদ্যুৎ ও অন্যান্য কাজে ঋণ গ্রহণ করেছি। যা এখনও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।’
ব্যবসায়ী কবির আহমদের বিরুদ্ধে মুর্শেদ বাহিনী মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য তথ্য দিয়ে তার সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন জাবেদ। তিনি মালিক পক্ষ থেকে কবির আহমদদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘মার্কেটের মোট সম্পত্তির মধ্যে আমার পিতা মরহুম আজিজুল হকের মালিকানা ৫৯ শতাংশ এবং আমার চাচা মরহুম আজিমুল হক শিরু মিয়ার মালিকানা ৪১ শতাংশ। বাবা ও চাচা জীবিত থাকা অবস্থায় আমাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করে পরিচালনার দায়িত্ব আমার উপর অর্পন করেন। তখন আমার চাচা আজিমুল হক শিরু মিয়া চেয়ারম্যান ছিলেন। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের দিকে আমার চাচাতো ভাই ফজলুল হক মুর্শেদ তার সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে মার্কেটের বেজমেন্ট অফিস ভাংচুর করে ও অবৈধভাবে মার্কেট দখল করে পরিচালনা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার চাচার হস্তক্ষেপে মার্কেট থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়।’
পরবর্তীতে চাচা আজিমুল হক শিরু মিয়ার অসুস্থতা ও পরবর্তীতে মৃত্যুর সুযোগে মুর্শেদ আবার অফিস দখল করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাবেদ বলেন, ‘চাচা অসুস্থ হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে কনিষ্ঠ পুত্র মো. এমদাদুল হক উবেদ (বর্তমান কাকলী শপিং সেন্টারের চেয়ারম্যান) এবং আমি শপিং সেন্টারটি পরিচালনা করতে থাকি। আমার অসুস্থতার কারণে শপিং সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব পালনে অনিয়মিত হয়ে পড়ি। এ সুযোগে ফজলুল হক মুর্শেদ কতিপয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে মার্কেট অফিস দখল করে। পরবর্তীতে চাচার মৃত্যু হলে সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।’
সম্প্রতি ফজলুল হক মুর্শেদ সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত উল্লেখ করে তিনি এ সব অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের জানমাল নিরাপত্তা রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কাকলী শপিং সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. এমদাদুল হক উবেদ, ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাকারিয়া ইমরুল, সেক্রেটারী শিপন খান, সদস্য ফয়সাল মাহমুদ ও মাহফুজুল হক উপস্থিত ছিলেন।