ঋতুবৈচিত্র্যের পালাবদলে প্রকৃতির বিভিন্ন সাজে প্রতিদিনের জীবনেও হয় হরেক রকম আয়োজন। শীতের আগমনে ঠান্ডার আমেজে প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপ ধারণ করে। নতুন ধানের সোঁদা গন্ধে গ্রামবাংলার উৎসবে পিঠে পুলির আনন্দ যোগ হয়। সেটা শুধু যে পল্লীবালার প্রাকৃতিক সম্ভারের অবারিত আঙিনাকে মাতিয়ে তোলে তা নয়। বরং প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর নগরে, শহরে ও বন্দরে তার আবেদনের মাত্রা কম কিছু নয়। এর ধারাবাহিকতায় পিঠা উৎসব দৃশ্যমান হচ্ছে খোদ রাজধানী ঢাকাতে। গ্রামবাংলার শিকড়ের ঐতিহ্য মাখানো পিঠের সম্ভার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ঢাকার বিভিন্ন স্টলে। ভাঁপা, চিতাই, পাটিসাপটা, মালকোয়াসহ রকমারি পিঠে পুলির অনন্য আয়োজন মুগ্ধ হওয়ার মতোই। শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত জায়গায় দর্শনার্থীর ভিড়ে দৃশ্যমান হলো বাহারি পিঠের নানা আয়োজন। যান্ত্রিক শহরে বসেও গ্রামীণ আবহকে উপলব্ধি করার মতো। এমন মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনন্দন আবহে দরাজকণ্ঠে মঞ্চ থেকে ভেসে আসে বাউলের অনবদ্য সুরের ব্যঞ্জনা। খাদ্য আর মানস সংস্কৃতি যেন মিলে মিশে একাকার। একদিকে ঢোলের উদাত্ত বাজনা সঙ্গে নৃত্যের অনবদ্য ঝঙ্কারে মুখরিত পুরো একাডেমি প্রাঙ্গণ। সব মিলিয়ে বাঙালী সংস্কৃতির চিরায়ত দ্যোতনা। পৌষের এই বিমুগ্ধ সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে সূচিত হয় পঞ্চদশ জাতীয় পিঠে উৎসব। দশ দিনব্যাপী আয়োজিত এই পিঠে পুলির আয়োজন ১৪ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। পিঠে উৎসবের সঙ্গে রয়েছে নৃত্য, গীত, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, যা আবহমান বাংলার শাশ্বত বৈভব, চিরস্থায়ী শৈল্পিক চর্চা। শুধু তাই নয়, হারিয়ে যাওয়া অনেক সমৃদ্ধবোধ নতুনভাবে সবাইকে জাগিয়েও দেয়।
প্রতিটি স্টলে সাজানো হয়েছে পিঠের রকমারি আয়োজন। বিকিকিনির চমৎকার অভিযোজনে বাণিজ্যের পরিসরও কম নয়। অনুষ্ঠানমালা থেকে বার্তা ভেসে আসে শীত ও পিঠে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। অবিচ্ছিন্ন এক মিলনগ্রন্থি হতে বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য আর ধনধান্যে পুষ্পে ভরা প্রকৃতি এক সুতায় গাঁথা। ৫০টি স্টলে পিঠে উৎসবের মহাআড়ম্বর শিল্পকলার শৈল্পিক দ্যোতনায় যে ঝঙ্কার তোলে তা বাঙাালর নান্দনিক শৌর্য।
ঢাকা শহরের বেইলী রোডে চলছে ভিন্ন মাত্রার এক আকর্ষণীয় পার্বত্য মেলা। যে মেলা দর্শনে পাহাড়ী এলাকায় যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ছে না। পার্বত্য অঞ্চলের সমাজ, সংস্কৃতি, লোকজ সম্পদ সব কিছুকে দারুণভাবে উপভোগ্য করে তুলেছে রাজধানীতে আয়োজিত এই মনোমুগ্ধকর পার্বত্য সংস্কৃতির উৎসব। বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীদের লালিত ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর করে দর্শক-শ্রোতার মধ্যে উপস্থাপন করাই এই আড়ম্বরের বার্তা। পাহাড়ী জাতি গোষ্ঠীর প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস পোশাক পরিচ্ছদ। তাদের জীবনবোধকে সবার মাঝে নিয়ে এসে ছড়িয়ে দেয়াও এই আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিভিন্ন স্টলে পার্বত্য অঞ্চলের জুম চাষের কৃষি পণ্যের পসরা সাজিয়ে দর্শকনন্দিত করার চিত্র উঠে আসে। অঞ্চলভিত্তিক সংস্কৃতি আর বৈভবে বাংলাদেশ এক সমৃদ্ধ এলাকা। আবার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে আপন পরিচয়ে উদ্দীপ্ত।