নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পশুরহাট বসানোর প্রস্তুতিতে একটি চক্র

15

সিন্টু রঞ্জন চন্দ

আর মাত্র কয়েকদিন পরই ঈদুল আজহা। এই ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সিলেট নগরীর পাড়া মহল্লা ও সড়কে যত্রতত্রভাবে কুরবানির পশুর অবৈধ হাট বসানোর পায়তারা করছে একটি চক্র। ইতি মধ্যেই নগরী ও শহরতলীর কয়েকটি স্থানে খুঁটি গেড়ে জায়গা দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া প্রতিবছর এসব অবৈধ কুরবানির পশুর হাট বসানোকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা, বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা। প্রতিবছরই অবৈধ হাট না বসাতে নির্দেশনা দেয় প্রশাসন ও সিসিক। কিন্তু বাস্তবে তাদের এ নির্দেশনা তুয়াক্কা না করে অবৈধ হাট বসায় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এসব অবৈধ হাটের নেপথ্যে রাজনৈতিক নেতাসহ প্রভাবশালীরা থাকায় প্রশাসন কোন কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। এতে করে শেষ মুহ‚র্তে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লার রাস্তা যেন পশুর হাটে পরিণত হয়।
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ১১টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত ৮টি স্থানে কুরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ইজারা আহŸান করেছে। আজ বৃহস্পতিবার ১৩ জুন থেকে আগামী ৫ দিন পর্যন্ত নগরীর নতুন টুকেরবাজার (তেমুখী পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা), মাছিমপুর কয়েদির মাঠের খালি জায়গা, মেজরটিলা বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহপরাণ পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহী ঈদগাহস্থ খেলার মাঠের পেছনের অংশ, সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন এস ফল্ট মাঠ ও দক্ষিণ সুরমা মোগলাবাজার থানাধীন ট্রাক টার্মিনালে কুরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। এছাড়া নগরীর কাজিরবাজারে প্রতি বছরের ন্যায় বসবে স্থায়ী হাট।
এদিকে মহানগরীর পাড়া-মহল্লা বা মূল সড়কে কুরবানির অবৈধ পশুর হাট যেন কেউ বসাতে না পারে সে বিষয়টি নিয়ে গত ১০ জুন সোমবার দুপুর ১টায় মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি জরুরি বিশেষ সভা সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠিত সভায় নির্ধারিত কুরবানির পশুর হাট ব্যতীত মহানগরীর যেকোন স্থানে অবৈধ হাট বসালেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ১৩ জুন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সিলেট নগরীতে ৮টি কুরবানির পশুর হাট ইজারা আহŸান করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ৮টি পশুর হাট ব্যতীত অবৈধ হাট বসতে দেয়া হবেনা। কেউ অবৈধ হাট বসালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট জেলায় স্থায়ী হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী ৩৮টি পশুর হাট বসেছিল। পাশাপাশি নগর এলাকায় ৭টি অস্থায়ী অনুমোদিত হাট বসে। কিন্তু জেলায় অনুমোদিত হাটের বাইরে অবৈধ হাট খুব একটা না বসলেও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ স্থানে হাট বসে। ঈদের তিন দিন আগে মহানগর পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ২২টি হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবছর নির্ধারিত পশুর হাটের বাইরে কোনো হাট বসতে দেওয়া হবে না- এমন ঘোষণা দিলেও মূলত কার্যকর হয় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যত্রতত্র হাটের কারণে মূল হাটগুলোতে ট্রাকভর্তি পশু নিয়ে পাইকার কিংবা ব্যবসায়ীরা প্রবেশ করতে পারেন না। নগরীর ঐতিহ্যবাহী পশুর স্থায়ী হাট কাজিরবাজার। এই হাটে অন্য জেলা থেকে পাইকাররা ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসার পথে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাইকারদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গরুর ট্রাকগুলো একটি চক্র তাদের অবৈধ হাটে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ক্রেতারা যেমন হয়রানীর শিকার হন তেমনি গরু পাইকারদেরও তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হতে হয়। শুধু তাই নয় গরুর ট্রাক ছিনিয়ে নেওয়ার সময়ও এ নিয়ে কোন কোন সড়কে মারামারির পাশাপাশি সহিংসতারও ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এবারও এমন আশঙ্কা থেকেই যায়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এবারও একটি চক্র হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তা পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। ওই সব এলাকার মধ্যে আছে টিলাগড় পয়েন্ট, সুবিদবাজার, রিকাবিবাজার, বাইপাস রোড হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কাজির বাজার সেতুর মুখ, কাজিটুলা।
এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, মহানগরীতে ৮টি অস্থায়ী কুরবানির পশুর হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যাতে কোনো হাট কেউ বসাতে না পারে, সে জন্য সিসিক নজর রাখবে।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিলেট বিভাগে কুরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭টি। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৮০টি ষাঁড়, ৪৯ হাজার ১০৩টি বলদ, ৩৩ হাজার ৩৭৫টি গাভী, ৪ হাজার ৫৩৩টি মহিষ, ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩টি ছাগল, ৭০ হাজার ৯৫৩টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু রয়েছে ১১০টি। এবার সিলেট জেলায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০৯টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯২১টি পশু। এর মধ্যে ৬১ হাজার ৫৪০টি ষাঁড়, ৩২ হাজার ৪টি বলদ, ৬ হাজার ১৫১টি গাভী, ২ হাজার ৩৯২টি মহিষ, ৫৬ হাজার ৯২টি ছাগল, ২২ হাজার ৭৩৭টি ভেড়া ও অন্যান্য পশু পাঁচটি। এবার কুরবানির চাহিদা পূরণ করে জেলায় ৩০ হাজার ২১২টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।