আরও একটি বিকল্প জ্বালানি তৈরির পথে বাংলাদেশ। এবার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে হাইড্রোজেন গ্যাস। পরিবেশবান্ধব এবং খরচও খুব কম। চালানো যাবে গাড়ি, ট্রেন এমনকি কলকারখানা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। শীঘ্রই চালু হবে বাণিজ্যিকভাবে। এই প্রযুক্তিতে বাংলাদেশও পিছিয়ে থাকতে চায় না। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গবেষণা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ল্যাবরেটরি। পরীক্ষামূলকভাবে গাড়িও চালানো হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোজেন গ্যাসকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহর শুরু করতে কাজ করছেন দেশের বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বে এখনও কয়লা-পেট্রোল-ডিজেলই মূল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই জ্বালানিতে খরচের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হয় মারাত্মকভাবে। এর বাইরে বিকল্প জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। একদিন গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদরা। এ কারণে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে বিকল্প জ্বালানি হিসাবে হাইড্রোজেন ব্যবহারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা বাণিজ্যিক প্রয়োগের।
হাইড্রোজেন জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০১৮ সালে ‘হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প’ গ্রহণ করে সরকার। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ এবং সরবরাহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। গবেষণার জন্য চট্টগ্রামে স্থাপন করা হয়েছে দেশের প্রথম হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার। চট্টগ্রামের বালুচরায় বিসিএসআইআর ক্যাম্পাসে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৪ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর হাইড্রোজেন গবেষণাগার ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
হাইড্রোজেন পুড়লে তৈরি হয় পানি। ফলে এটি নবায়নযোগ্য এবং শতভাগ পরিবেশবান্ধব। গবেষকরা জানিয়েছেন, এক লিটার পেট্রোল ব্যবহার করে একটি গাড়ি চলতে পারে সর্বোচ্চ ১৫/১৬ কিলোমিটার। এক লিটার হাইড্রোজেন ফুয়েলে চলবে এক শ’ কিলোমিটারের বেশি। যানবাহনে এই ফুয়েলের জন্য আলাদা স্টেশনের প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান সিএনজি স্টেশনগুলোতে আলাদা একটি ইউনিট স্থাপনই যথেষ্ট। বাণিজ্যিক উৎপাদন সফল হলে হাইড্রোজেন গ্যাস বিদ্যুত উৎপাদনেও ব্যবহার করা যাবে।