স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে দারুণ খেলতে থাকা নিউজিল্যান্ড। পাঁচ খেলায় চার জয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে কেন উইলিয়ামসনের দল। আসরে এ পর্যন্ত যে দুটি দল হারের স্বাদ পায়নি নিউজিল্যান্ড তাদের একটি, অপরটি ভারত। সর্বশেষ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে হারায় কিউইরা। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রায় একাই জয় ছিনিয়ে আনেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন (১০৬*)। গ্রেট ড্যানিয়েল ভেট্টোরি তো এরই মধ্যে তাকে নিউজিল্যান্ড ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানকে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ক্যারিবীয়দের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। পরের চার ম্যাচের তিনটিতে হারা জেসন হোল্ডারের দল এখন ভীষণ বেকায়দায়। এক জয় ও এক পরিত্যক্ত মিলিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সপ্তম স্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওল্টট্র্যাফোর্ডে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।
কিউইদের বিপক্ষে যেভাবে দলকে জিতিয়েছেন তাতে উইলিয়ামসনের কথা না বললেই নয়। বৃষ্টিতে ৪৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ২৪১ রান চেজ করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ৮০ রানে চতুর্থ ও ১৩৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় কিউইরা। আস্কিং রান রেটের চাপও বাড়তে থাকে। দারুণ সঙ্গ দিতে থাকা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (৪৭ বলে ৬০) যখন ফেরেন ৬ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের রান তখন ২২৮। প্রোটিয়াদের হয়ে দুর্দান্ত বল করছিলেন চোট কাটিয়ে ফেরা লুঙ্গি এনগিদি। ১৪ মিনিট ক্রিজে থেকে উইলিয়ামসনকে স্ট্রাইক দিয়েছেন মিচেল স্যান্টনার। আর কঠিন চাপের মুখে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন অধিনায়ক। ১৩৬ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ১০৬ রান করে অবধারিত ম্যাচসেরা উইলিয়ামসন। জয়টা এসেছে ৩ বল বাকি থাকতে।
সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ড্যানিয়ে ভেট্টোরি বলেন, ‘উইলিয়ামসনের ব্যাটিং এপ্রোচ তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। সে যেভাবে খেলা বুঝে নেয় বা পড়ে নেয় তা দুর্দান্ত। এটাই তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরাদের কাতারে নিয়ে এসেছে।’ নিউজিল্যান্ড গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ। ২০১৫ সালে ফাইনালে উঠে প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল কিউইদের। আধুনিক ক্রিকেটে সবসময়ই সমীহ জাগানিয়া দলটি আগের ১১ বিশ্বকাপে ছয়বারই সেমিফাইনালে খেলেছে! ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সবমিলিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। ওপেনিংয়ে মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো। টপঅর্ডারে অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সঙ্গী ইনফর্ম রস টেইলর। শেষ ম্যাচে বলতে গেলে যিনি একাই বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। সাবেক কিউই অধিনায়ক সেদিন খেলেছিলেন ৮২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান টম লাথামও প্রয়োজনে কম যান না। অলরাউন্ডার হিসেবে জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহোম বেশ কার্যকর। স্পিনে মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি।
আর যেটির কথা আলাদা করে বলতে হয় সেটি নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণ। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, কলাম ফার্গুসনের পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম পেসার হিসেবে আছেন নিশাম আর গ্রান্ডহোম। আফগানিস্তানকে ১৭২ রানে গুঁড়িয়ে দেয়ার পথে নিশান নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, ফার্গুসন ৪টি। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আরেক ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল পাকিস্তানকে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে হৈচৈ ফেলে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তুলে নিয়েছিল ৭ উইকেটের জয়। কিন্তু এরপর ব্যর্থ ক্যারিবীয়দের একে একে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশের কাছে হার ১৫ রান, ৮ ও ৭ উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। অথচ জেসন হোল্ডারের দলে অনেক তারকার ছড়াছড়ি। ১৯৭৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মুখোমুখি ৬৪ ওয়ানডের ৩০টিতে জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের, নিউজিল্যান্ডের সাফল্য ২৭। পরিত্যক্ত ৭। বিশ্বকাপ ইতিহাসে আবার ৭ দেখায় ৪ জয়ে এগিয়ে কিউইরা, ক্যারিবীয়দের সাফল্য সেখানে ৩ বার।