স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমা কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার না করতে না পারায় আইনশৃংখলাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম। রবিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনি দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জানান। অন্যথায়, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই শোকাহত ও ক্ষোব্ধ। প্রিয় ছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় দুঃখ ও নিন্দা প্রকাশ করছি। প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারায় আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছি।‘
তিনি অবিলম্বে ঘাতকদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট তথা দেশের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ শিক্ষার দিক দিয়ে সুনাম অর্জন করেছে। কলেজটি সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত। কলেজের ক্যাম্পাসে সবধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। ১৯৮৯ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত কলেজ ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেজেটের মাধ্যমে জাতীয়করণ হয়। সরকারি নিয়মানুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজ পরিচালনা করা হচ্ছে।‘
‘কলেজে একাদশসহ সবশ্রেণিতে ভর্তির সময় রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো রাজনীতি করবে না মর্মে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গিকার নেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায়ের লক্ষ্যে কলেজকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে আমাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬ সালে কলেজে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক -কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সহযোগিতায় অরাজনৈতিক শিক্ষার পরিবেশ বহাল রাখতে পেরেছি। ২০০৯ সাল থেকে একটি স্বার্থান্বেষীমহল তাদের ফায়দা হাসিলের জন্যে অপতৎপরতা শুরু করে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এদেরকে প্রতিরোধ করেছি। দীর্ঘদিন ধরে আসা অরাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করতে ঐ মহল তাদের অপতৎপরতা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।‘
গত ২১ অক্টোবরের ঘটনা কলেজের এতোদিনের অর্জন ও ঐতিহ্য ম্লান করে দিয়েছে বলে মনে করেন কলেজের অধ্যক্ষ।
ঘটনার সময় নিজে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় উপস্থিত ছিলেন দাবি করে শামসুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
এ ঘটনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান ও কলেজ অধ্যক্ষ রাহাতের বাড়িতে যান এবং পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘাতকদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। শনিবার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ৩০ অক্টোবর নিহত রাহাতের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল, নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর পাঠদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডের পরও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারা দুঃখজনকও লজ্জাজনক উল্লেখ করে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘এতে আইনশৃংখলা বাহিনীর ভাবমূর্তিও সংকটে পড়বে। যদি অবিলম্বে রাহাতের ঘাতকদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা না হয় তাহলে কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামবে এবং দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। রাজপথে শিক্ষার্থীরা নেমে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর সব দায়ভার আইনশৃংখলা বাহিনীকেই বহন করতে হবে।‘
এ সময় কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজরী রানী ধর, শিক্ষক সাব্বির আহমদ, আশরাফুল হক, রাহেনা হক, ছালমা ইয়াছমিন, মতিলাল দাশ, মুহিবুর রহমান, আতাউর রহমান, সুভাষ চন্দ্র সাহা, জয়নুল ইসলাম, পলাশ রঞ্জন দাশ, ময়নুল হক, শ্যামলী চক্রবর্তী, নাফিস সাকিনা, কানিজ ফাতেমা, শুকরিয়া জাহান, ফাতেমা খানম, শিল্পী মালাকার, মাহমুদা আক্তার, শাহরিয়ার খান, গিলমান আলী, আতাউর রহমান ভূঞা, শফিকুল ইসলাম, নুসরাত ফাতেমা, মাহবুবা বেগম, বিশ্বজিৎ ধাম, খালেদ আহমদ, শাহ আলম, রেজওয়ানা তাসলিম, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল বাতেন, আব্দুন নুর শামীম উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কমিটির আহবায়ক আশরাফুল হক, সদস্য মুহিবুর রহমান ও জয়নুল ইসলামও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।