ই-কমার্সে প্রতারণার সুযোগ বন্ধ হবে চিরতরে

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে আগামী দুই মাসের মধ্যে যুগোপযোগী ‘ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া এ খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও প্রতারণা ঠেকাতে একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা রেগুলেটরি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া ভবিষ্যতে ই-কমার্স ব্যবসা করার কোন সুযোগ থাকবে না। এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সদ্য এ সংক্রান্ত গঠিত ১৬ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে নতুন নীতিমালা করা হবে। আগামী মঙ্গলবার কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকেই ই-কমার্স খাতের জন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ডিজিটাল কমার্স আইনটি প্রণয়নে বিদেশী উন্নত রাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা গেছে, আধুনিক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ই-কমার্সের গুরুত্ব অপরিহার্য হয়ে উঠছে। অর্থনীতিতে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে ই-কমার্স খাত। এ কারণে বিতর্কিত এমএলএম কোম্পানির মতো ই-কমার্স খাত বন্ধ করা হচ্ছে না। বরং যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চায় সরকার। বিতর্কিত ও আলোচিত ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, রিং আইডি কিংবা ধামাকার মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা চিরতরে বন্ধ করার কৌশল থাকবে নতুন নীতিমালায়। নতুন নীতিমালায় গ্রাহক স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এতে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দেশের ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা আনতে একটি রেগুলেটরি কমিশন গঠন করা সবচেয়ে বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল প্রতারণা হলে যেন বিচার করা যায় সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট এবং মানিলন্ডারিং এ্যাক্টে কিছু সংশোধন আনতে হবে। সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা একমত হয়েছেন।
জানা গেছে, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশে দ্রুত প্রসার ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে অনলাইন শপিং। বিশেষ করে করোনার ভয় কিংবা কাজের চাপে যাদের বাইরে যাওয়ার তেমন সুযোগ হয় না তাদের কাছে অনলাইনের গুরুত্ব আরও বেশি। কিন্তু পণ্য ডেলিভারি, পেমেন্ট ব্যবস্থা, উদ্যোক্তাদের অদক্ষতা, অর্থায়ন এবং ভোক্তাদের অজ্ঞতার মতো বিষয়গুলোর কারণে নতুন এই ব্যবসায়ে প্রতারণার সুযোগ নিচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। ই-ভ্যালিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড প্রশ্নের মুখে পড়ায় ই-কমার্স ব্যবসা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ভোক্তার স্বার্থ নিশ্চিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন করবে নতুন কমিটি।
এতে ‘ই-কমার্স পরিচালনা নীতিমালা’ সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ উল্লেখ থাকবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান প্রবলেন, ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন গঠিত এই কমিটি কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে করণীয় নির্ধারণে কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সুপারিশ করবে। বিধিমালা অনুসারে নতুন করে আইন প্রণয়ন ও অথরিটি গঠনে কাজ করবে এই কমিটি। তিনি বলেন, আগে যে আইন ও নির্দেশনাটি করা হয়েছিল সেখানে ব্যাপক পরিবর্তন এনে নতুন ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা করা হচ্ছে। এই আইনের মধ্যে সবকিছু সন্নিবেশিত থাকবে। তিনি বলেন, নতুন আইনটি প্রণয়নে বিদেশী মডেল অনুসরণ করা হবে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের ডিজিটাল কমার্স আইন অনুসরণ করবে কমিটি।
জানা গেছে, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের পাশাপাশি দেশের অন্তত ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কেনা পণ্য দিচ্ছে না। টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। কোন কোন প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে পাওনার বিপরীতে ব্যাংকের চেক দিয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকায় তা ফেরত আসছে। এর মধ্যে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, নিরাপদ ডটকম ও এসপিসি ওয়ার্ল্ড রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর বাইরে এখনও মামলা হয়নি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭টি। আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল প্লাস, আদিয়ান মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ ও প্রিয় শপ। এই ১২ প্রতিষ্ঠানের কাছে সব মিলিয়ে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের পাওনা কত, তার কোন হিসাব নেই। তবে পুলিশ, র‌্যাব, গ্রাহক ও মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী, ৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছ গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের ৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা পাওনার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে ইভ্যালির ৯৫০ কোটি, ই-অরেঞ্জের ১ হাজার ১০০ কোটি, ধামাকার ৮০৩ কোটি ও এসপিসি ওয়ার্ল্ডের ২৬৮ কোটি টাকা দেনার তথ্য রয়েছে।
সূত্রমতে, করোনা মহামারীর মতো বর্তমান দুর্যোগে নগরবাসীর অনেকের কাছে ভরসা হয়ে উঠেছে অনলাইন শপিং। এ কারণে গত কয়েক বছরে দেশে এ খাতে প্রায় ২০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। অনলাইন শপিংয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার পণ্যের ডেলিভারি হচ্ছে। শুধু অনলাইনে বছরে বেচাকেনা হচ্ছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে এসেছে বিদেশী বিনিয়োগ। আলিবাবা, আমাজান ও দারাজের মতো বিশ্বসেরা ই-কমার্স কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিদেশী কোম্পানিগুলো ই-কমার্স খাতে ৪৯ শতাংশ বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া বাকি ৫১ শতাংশের মালিকানা সরকার কিংবা বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা। এ কারণে যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমেও কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে পেজ খুলে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সাইট কোনটি তা বোঝা কঠিন।