পাকিস্তান নিউজিল্যান্ড লড়াই আজ

32

স্পোর্টস ডেস্ক :
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পাকিস্তান আগে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে এখন সেমির স্বপ্ন দেখছে। ৬ ম্যাচে ২ জয়ের বিপরীতে ৩ হার ও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ১ ম্যাচের পয়েন্ট (৫) ভাগাভাগি করে টেবিলের সপ্তম স্থানে সরফরাজ আহমেদের দল। বাকি তিন ম্যাচের সবকটিতে জয় পেলে পয়েন্ট হবে ১১। শেষ দুই ম্যাচে আফগানিস্তান আর বাংলাদেশকে হারানোর আশাটা হয়তো অমূলক নয়, কিন্তু তার আগে আজ যে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের! বাস্তবতার বিচারে ম্যাচটা পাকিস্তানের জন্য কেবল পরীক্ষাই নয়, অগ্নীপরীক্ষা বলতে হবে। কারণ শুরু থেকে সরফরাজবাহিনী যেখানে ধুঁকে ধুঁকে এগোচ্ছে, সেখানে রীতিমতো উড়ছে কেন উইলিয়ামসনের দল। ১২তম বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত যে দুটি দল কোন ম্যাচে হারেনি নিউজিল্যান্ড তাদের একটি, অপরটি ভারত। নরম-গরম সব প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে সেমির পথে অনেকদূর এগিয়ে কিউইরা। ৬ ম্যাচে ৫ জয় ও একটিতে পয়েন্ট (১১) ভাগাভাগি করে টেবিলের শীর্ষে ব্ল্যাক-ক্যাপসরা। বার্মিহ্যামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই ইংল্যান্ডেই চিরশত্রু ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। হিসেবের বাইরে থেকেও ‘জিরো থেকে হিরো’ বনে গিয়েছিলেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। তখন অনেকেই ভেবেছিল দুই বছরের ব্যবধানে সেই ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে অংশ নেবে এশিয়ান ক্রিকেটের আলোচিত দলটি। কিন্তু পাকিস্তান যে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর থেকেই পতনের শুরু। এশিয়া কাপ, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এবং পয়মন্ত আমিরাতে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুটি সিরিজে ভরাডুবির পর ঠিক বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ড সফরেও বিধ্বস্ত হয় পাকিরা। ওয়ানডেতে টানা দশ হারের ব্যর্থতা সঙ্গী করে আসরের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০৫ রানে অলআউট। ৭ উইকেটের হারে নিজেদের লজ্জার রেকর্ডটা ১১তে উন্নীত করার পর কে ভেবেছিল ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেবে তারা? পাকিস্তান বলেই সম্ভব। যে ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপের হট-ফেভারিট, শিরোপার অন্যতম দাবিদার সেই তাদেরই বিপক্ষে ৩৪৮ রানের বিশাল স্কোর গড়ে সরফরজরা তুলে নেয় ১৪ রানের জয়।
পাকিদের এই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ মেজাজটাই হতে পারে নিউজিল্যান্ডের জন্য ভয়ের কারণ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচটা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। এরপরই অস্ট্রেলিয়া ও চিরশত্রু ভারতের কাছে হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সরফরাজের দল। চারিদিক থেকে তীরের মতো ছুটে আসে সমালোচনা। প্রকাশ্যে অধিনায়কের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এক সমর্থক তো সামনাসামনি প্রশ্নই করে বসেন,‘আপনার শরীর শুকরের মতো মোটা কেন?’ বুঝুন অবস্থা। ভারতের কাছে ৮৯ রানের লজ্জার হারের পর সরফরাজ নিজেও সতীর্থদের বলেছিলেন, সবাইকেই কিন্তু দেশে ফিরতে হবে! সেই তারাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বার্মিহ্যামে ৭ উইকেটে ৩০৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে পাকিস্তান। এরপর প্রোটিয়াদের ২৫৯/৯-এ থামিয়ে দিয়ে আসে ৪৯ রানের জয়। চমৎকার ব্যাটিং করেন দীর্ঘ চার ম্যাচ পর শোয়েব মালিকের স্থলে সুযোগ পাওয়া হারিস সোহেল। ওপেনিংয়ে ইমাম উল হক আর ফখর জামানও ভাল শুরু এনে দেন। দু’জনেই করেন ৪৪ রান। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আরেক তারকা বাবর আজম (৬৯)।
তবে একজনের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে, তিনি মোহাম্মদ আমির। বল হাতে বলতে গেলে পাকিস্তানকে একাই টানছেন অনেক নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া এ বাঁহাতি পেসার। দুর্দান্ত ১৫ উইকেট নিয়ে জোফরা আর্চার ও মিচেল স্টার্কের সঙ্গে যৌথভাবে টুর্নামেন্টের শীর্ষ উইকেট শিকারি আমির। সেরা ৫/৩০। আসরে এ পর্যন্ত ৮ উইকেট নেয়া আরেক বাঁহাতি ওয়াহাব রিয়াজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। আছেন শাদাব খান-ইমাদ ওয়াসিমের মতো স্পিনার। সবাই এক সঙ্গে জ্বলে উঠলে যে কোন কিছুই সম্ভব। ‘নিঃসন্দেহে আমরা বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আছি। অবশ্যই আমাদের ভাগ্য অনেকটাই অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে। তবে আমাদেরও বাকি তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। আমরা সেমিতে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও আত্মবিশ্বাসী। ছেলেরা সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছে’ বলেন পাকিস্তান কোচ মিকি আর্থার। আজকের ম্যাচটা জিতে গেলে এই আত্মবিশ্বাস যে আরও বাড়বে সেটি বলাইবাহুল্য।
অন্যদিকে গত বিশ্বকাপের (২০১৫) ফাইনালে উঠেও প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল কিউইদের। আধুনিক ক্রিকেটে সবসময়ই সমীহ জাগানিয়া দলটি আগের ১১ বিশ্বকাপে ছয়বারই সেমিফাইনালে খেলেছে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব মিলিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। ওপেনিংয়ে মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো। টপঅর্ডারে অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সঙ্গী ইনফর্ম রস টেইলর। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান টম লাথামও প্রয়োজনে কম যান না। অলরাউন্ডার হিসেবে জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহোম বেশ কার্যকর। স্পিনে মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি। আর যেটির কথা আলাদা করে বলতে হয় সেটি নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণ। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লোকি ফার্গুসনের পাশাপাশি চতুর্থ ও পঞ্চম পেসার হিসেবে আছেন নিশাম আর গ্রান্ডহোম। ১০ উইকেটের বড় জয়ের পথে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে মিশন শুরু করেছিল নিউজিল্যান্ড। এরপর একে একে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা হারিয়েছে যথাক্রমে ২, ৭, ৪ উইকেট ও ৫ রানে। ১৪ উইকেট নিয়ে এ পর্যায়ে আসরের দিদ্বতীয় সর্বোচ্চ শিকারি লোকি ফার্গুসন। বোল্ট-হেনরির শিকার ৮টি করে। ১৮৬ গড়ে ৩৭৩ রান করেছেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন।
১৯৭৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মুখোমুখি ১০৬ ওয়ানডের ৫৪টিতে জিতে এগিয়ে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের সাফল্য ৪৮। টাই ১ ও পরিত্যক্ত ৩। আর বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৮ দেখায় ৬ জয় পাকিস্তানের, কিউইদের জয় ২টি। দুই পরিসংখ্যানেই এগিয়ে পাকিস্তান। সঙ্গে আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে সরফরাজরা কি পারবে কিউইদের থামাতে? সেটিই দেখার অপেক্ষা।