সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলঙ্কার সর্বশেষ পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত ও উদ্বেগজনক। দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। একযোগে পদত্যাগ করেছে মন্ত্রিসভা। দায়িত্ব নেয়ার মাত্র একদিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। রাষ্ট্রীয় কোষাগার প্রায় শূন্য। খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। প্রেসিডেন্টসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিদিনই চলছে সহিংস ক্ষোভ-বিক্ষোভ-অবরোধ-আন্দোলন। রেকর্ড মূল্যস্ফীতিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ, অপরিমিত যুদ্ধ ব্যয়, নিরাপত্তাহীনতা, বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা, ব্যয়বহুল অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প যেমনÑ চীনের ঋণে হাম্বানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর, লোটাস টাওয়ার, পোশাক ও পর্যটন শিল্পে ধস সর্বোপরি অর্গানিক ফুডের নামে পুরনো পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেশটির বর্তমান ভঙ্গুর দশার জন্য দায়ী বহুলাংশে। সে অবস্থায় শ্রীলঙ্কার রেফারেন্স টেনে তুমুল আলোচনা ও বিতর্ক চলছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান এমনকি বাংলাদেশেও। বিশেষ করে অর্থনীতিবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদদের কাছে এটি বিতর্কের একটি মুখরোচক বিষয়ও বটে। এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থা তুলনীয় হতে পারে না। এটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এমনকি সামাজিক বিজ্ঞানেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা অনেক কম। রিজার্ভ, রেমিটেন্স, পোশাক রফতানি, মেগা প্রকল্পÑ প্রায় সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় মজবুত ও সুদূরপ্রসারী। সেক্ষেত্রে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কিছু নেই বললেই চলে। জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বক্তব্যেও এর সমর্থন মেলে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি শর্ত পূরণ করেছে। ২০২৪ সাল নাগাদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। পদ্মা সেতুর মতো সুবৃহৎ প্রকল্প, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে আরও কয়েক ধাপ। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করতে হবে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে। সুতরাং উদ্বেগ ও আশঙ্কার কিছু নেই বললেই চলে।