শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
প্রথমে ঈদ বোনাস ও পরবর্তীতে গ্যাসের বৃদ্ধির অজুহাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সবকটি সড়কে সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
বর্ধিত ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে চালকদের ঝগড়া-বাকবিতন্ডা হচ্ছে। ছাত্র থেকে শুরু করে পেশাজীবী পর্যন্ত সবাই ভাড়া নিয়ে দূর্ভোগে পড়লেও প্রশাসন নিরব রয়েছে। ফলে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কমলগঞ্জের সচেতন যুবসমাজ আন্দোলনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
জানা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে কমলগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে সিএনজির চালকরা ঈদ বোনাস দাবী করে প্রথম ২/৩দিন যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা ভাড়া আদায় করেছে। ঈদের এক সপ্তাহ পরও ভাড়া না কমায় যাত্রীরা প্রতিবাদ জানালে সিএনজি অটোরিক্সার চালকরা গ্যাস বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে দাবী করে।
যাত্রীরা জানান, বৃদ্ধি করা ভাড়ায় এখন কমলগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার শহরের ভাড়া ৪৫ টাকা, শমশেরনগর থেকে শ্রীমঙ্গল শহরের ভাড়া ৫০ টাকা, মুন্সীবাজার থেকে শমশেরনগর ২০ টাকা, কমলগঞ্জ থেকে মুন্সীবাজার ২০, কমলগঞ্জ থেকে ইসলামপুর ৫০ টাকা, শমশেরনগর থেকে কমলগঞ্জ ২০ টাকা, মশেরনগর থেকে পতনঊষার ২০ টাকা। এককথায় প্রতিটি সড়কে ৫ থেকে ১০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আলাপকালে ভূক্তভোগী যাত্রী বিকাশ রায়, কলেজ ছাত্র অঞ্জন দেবনাথ, শিক্ষিকা লাভলী বেগম, শমশেরনগর-মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীবাহী বাস না থাকায় সুযোগ বুঝে চালকরা দফায় দফায় ইচ্ছেমত ভাড়া বৃদ্ধি করছেন। যাত্রীরা প্রতিবাদ জানালে প্রায় সময় চালকদের হাতে নাজেহাল হতে হয়। ফলে যথারীতি পকেট কাটা যাচ্ছে যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ- ঠিকমতো মনিটরিং না থাকায় এই নৈরাজ্য।
অন্যদিকে চালক ও মালিকরা বলছেন, বার-বার একই পরিস্থিতির তৈরীর মূলে রয়েছে, সিএনজি অটোরিক্সার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও লাইসেন্স নিয়ে দুর্নীতি। সিএনজি চালকের সাথে দরদাম, এমন ঘটনা নিত্যদিনের।
ব্যবসায়ী আব্দুল হাদী জুমন বলেন, কমলগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে অযৌক্তিকভাবে সিএনজির ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। উপজেলা শাখার নেতারা ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি জানেন না। কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ যাত্রী সাধারন হয়রানির শিকার।
ব্যাংকার প্রমোদ সিনহা জানান, সিএনজি চালকরা নানা অজুহাতে কয়েকদিন পরপর দাম বাড়ানোর পায়তারা করে।। কখনও গ্যাসের দাম, অবরোধ, হরতাল, ঈদ, পূজা ইত্যাদি।। এভাবে আর কতদিন চলবে?
লেখক-গবেষক ও উন্নয়ন চিন্তক আহমদ সিরাজ বলেন, যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই কমলগঞ্জ এর প্রায় সর্বত্র যাত্রী পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোনো পূর্বালোচনা ছাড়াই হঠাৎ এরকম ভাড়া বৃদ্ধিতে সাধারণ যাত্রীরা বিরাট অসুবিধায় পড়েছেন। এ ব্যাপারে তড়িৎ যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলমাছ মিয়া বলেন, আমাদের সমিতির কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিভিন্ন রুটে ৫-১০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা দেখতেছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।