বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
রেদওয়ান আহমদ। পনেরো বছর বয়সের এক দুরন্ত কিশোর৷ মৌলভীবাজারের বড়লেখার ইটাউরি হাজী ইউনিউছ মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ায় অত্যন্ত পটু এই কিশোর পড়ালেখার পাশাপাশি সবসময় চেষ্টা করে মানুষের পাশে থাকার। তারই ধারাবাহিকতায় স্ব প্রণোদিত হয়ে এবার সে উদ্যোগ নিয়েছে তার এলাকার সাধারণ মানুষকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের টিকার আওতায় নিয়ে আসতে। সে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘সুরক্ষা অ্যাপের’ মাধ্যমে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে দিচ্ছে। দেশে প্রথম যখন করোনা ভাইরাসের টিকা আসে তখন থেকে সে এই কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সে তার গ্রাম নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের বৃহত্তর ইটাউরি গ্রামের প্রায় শতকের কাছাকাছি মানুষের টিকার নিবন্ধন করে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ কোন ভোগান্তি ছাড়াই সহজে টিকা গ্রহণ করতে পারছেন। সহজে টিকার নিবন্ধন করতে পেরে গ্রামের মানুষেরা রেদওয়ানের প্রশংসা করছেন।
এলাকার অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিকে যখন দেশে করোনার টিকা আসে তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের প্রতি আগ্রহ ছিলো না। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা মিথ প্রচলিত হয়ে গিয়েছিলো টিকা গ্রহণ করলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারে। যার ফলে গ্রামের সহজ সরল মানুষ ভয়ে টিকা গ্রহণে আগ্রহ দেখাননি৷ তখন রেদওয়ান সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকার এই ভীতি কাটানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহন করে। সে নিজ উদ্যোগে গ্রামের সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। টিকা গ্রহনের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করে। এতে করে গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে টিকা ভীতি কাটতে শুরু করে। মানুষ তার মাধ্যমে টিকা গ্রহণের জন্য সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে শুরু করেন। বর্তমানে সে তার গ্রামের প্রায় শতকের কাছাকাছি মানুষের করোনার টিকা নিবন্ধন করে দিয়েছে। প্রতিদিনই তার বাড়িতে মানুষজন আসছেন টিকার নিবন্ধন করাতে, আবার অনেকে ফোন দিয়ে বাড়িতে নিয়ে টিকার নিবন্ধন করাচ্ছেন।
ইটাউরি গ্রামের মরিয়ম বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘করোনার টিকা নেওয়ার জন্য রেদওয়ানের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছি। সে গ্রামের মানুষদের বিনামূল্যে টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছে। ‘
আকরামুল হক নামের এক যুবক বলেন ‘ টিকার প্রতি আগ্রহ ছিলো না। পরে রেদওয়ানের অনুপ্রেরণায় টিকার প্রতি আগ্রহ জাগে। তার মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন করেছি। ম্যাসেজের অপেক্ষায় আছি। ম্যাসেজ আসলে টিকা দিয়ে আসবো। আমার পরিবারের সবাইকে সে নিবন্ধন করে দিয়েছে৷
সাদিউর রহমান নামের একজন বলেন, ‘টিকা নিবন্ধন কিভাবে করতে হয় জানিনা। রেদওয়ান গ্রামের মানুষদের টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছে শুনে তার মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন করিয়েছি৷ সে গ্রামের মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছে। আমি গত ৭ তারিখ টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছি৷ আলহামদুলিল্লাহ আমি সুস্থ আছি৷ আমাদের সকলের টিকা গ্রহণ করা জরুরি।
এ বিষয়ে কিশোর রেদওয়ান আহমদ বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে৷ প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এখন গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় এর টিকা গ্রহণ৷ সরকার দেশের মানুষের জন্য ফ্রি টিকার ব্যবস্থা করেছে৷ গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। তাই অনেকেই ভয়ে টিকা গ্রহণ করছেন না। আমি সাধারণ মানুষদের মধ্যে টিকার ভীতি দূর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি৷ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করি৷ মানুষকে টিকা গ্রহণের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝাতে চেষ্টা করি। এতে মানুষ সাড়া দেয়। এ পর্যন্ত আমি গ্রামের ও গ্রামের বাহিরের প্রায় শতকের কাছাকাছি মানুষের টিকা নিবন্ধন করে দিয়েছি। টিকা নিবন্ধন করে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করার পরামর্শ জানাচ্ছি।