আমাদের দেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রীতিমতো স্বেচ্ছাচার চলছে। সেবার কোনো মানদ- নেই। নৈতিক দায়বদ্ধতাও নেই। সর্বক্ষণ রোগীদের পকেট কাটার প্রতিযোগিতা চলে। সবচেয়ে বাজে অবস্থা দেখা যায় প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের প্রচুর ঘটনা ঘটে। সেই সত্যটি উঠে এসেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (নিপোর্ট) গবেষণায়ও। বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে-২০২১ (বিইউএইচএস) শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সন্তান প্রসবের ৮৩ শতাংশই হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী এই হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। তার অর্থ বেসরকারি হাসপাতালে এই হার সাত-আট গুণ বেশি। এমন প্রবণতা নবজাতক ও প্রসূতি মাÑকারো জন্যই ভালো নয়। ,
অপ্রয়োজনীয় এবং যোগ্যতাহীন অস্ত্রোপচারের ঘটনা নিয়ে এর আগেও অনেক প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলেও উঠে এসেছে এমন তথ্য। তা সত্ত্বেও এই উদ্বেগজনক প্রবণতাটি না কমে বরং বেড়ে চলেছে। বর্তমান গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে যেসব প্রসূতি মা সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার আওতায় থাকেন, তাঁদের ৭৭ শতাংশেরই সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়। অন্যান্য শহরে এই হার ৭৫ শতাংশ। মহানগরের বস্তি এলাকায় এই হার ৫৮.৩ শতাংশ। অর্থাৎ এটি স্পষ্ট যে বস্তির বাসিন্দাদের আর্থিক সংগতি কম থাকায় ক্লিনিকগুলো তাদের ঠিকমতো অপারেশন টেবিলে নিতে পারে না। ,
বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের প্রতিযোগিতার পেছনে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ব্যর্থতাও কম দায়ী নয়। সেগুলোতে দীর্ঘ লাইন লেগেই থাকে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারায় ভ্যানে বা রাস্তায় সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটে। চিকিৎসকরা আধাবেলাও হাসপাতালে থাকতে চান না। ফলে রোগীদের আস্থায় ঘাটতি দেখা যায়। দালালদের দৌরাত্ম্যও রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার একটি বড় কারণ। ,
অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের এই ক্ষতিকর ধারাটি থেকে প্রসূতি ও নবজাতকদের নিরাপদ করার জন্য সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করতে হবে। ২৪ ঘণ্টা সেবাদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেবার মান বাড়াতে হবে এবং স্বাভাবিক সন্তান প্রসবকে উৎসাহিত করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর জন্য এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি করতে হবে এবং সেগুলো যাতে যথাযথভাবে মেনে চলা হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নজরদারি রাখতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশে প্রসবকালীন স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।