কাজিরবাজার ডেস্ক :
শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলতে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সাড়ে ২৮ লাখের বেশি অ্যাকাউন্ট খুলেছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে সঞ্চয় স্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য থেকে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ে শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা হয়েছে ২৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৩টি। আর এতে শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকার বেশি। এরমধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীদের আছে ১ হাজার ২০২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর মেয়েদের ১ হাজার ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৫২ শতাংশ হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ৪৮ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে। এ সময়ে গ্রামীণ পর্যায়ে এই প্রান্তিকে হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে শহরে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর আর কোনো কনফারেন্স হয়নি। পাশাপাশি গত দুই বছরে ১৮ বছর অতিক্রম করেছে অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়াও মহামারির অভিঘাতে অনেক পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়াও স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে এর একটি বড় প্রভাব পড়েছে। যে কারণে শহরের স্কুলে ব্যাংকিং কমলেও গ্রামে বেড়েছে।
এরমধ্যে ঢাকা বিভাগ ২০২১ সালে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব ও আমানতের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। মোট হিসাব নম্বরের ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ এই বিভাগে। যা মোট আমানতের ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এছাড়া চট্টগ্রামে হিসাব রয়েছে ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ যার হিসাব সংখ্যা (৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪১টি) ও আমানত রয়েছে ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ যার টাকার পরিমান (৫০৮ কোটি ২৮ লাখ)।
অন্যদিকে একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে শিক্ষার্থীদের হিসাব ১৪ দশমিক ০০ শতাংশ যার সংখ্যা (৪ লাখ ১ হাজার ২৭২টি) এর আমানতের পরিমান ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ যার টাকার পরিমান (১৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা)।
এছাড়া খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহের হিসাব যথাক্রমে ১০.৭৭, ৫.৩৭, ৯.১৯, ৭.৯০ ও ৫.৮৪ শতাংশ। যার টাকার পরিমাণ যথাক্রমে ৭.৪৪, ৩.৪৯, ৫.৯৪, ৪.১৬, ৩.২৫ শতাংশ।
জানা যায়, স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব এর ৫৪ শতাংশ ছেলে ও ৪৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে। আমানতের দিক থেকে ৫৪ দশমিক ৫১ শতাংশ ছেলে ও ৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ মেয়ে। এই প্রান্তিকে ছেলে ও মেয়ের হিসাব বৃদ্ধি যথাক্রমে ৩.১২ শতাংশ ও ২.৮৪ শতাংশ। একই সময়ে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ১.২৯ শতাংশ ও ২.৩১ শতাংশ হারে।
ব্যাংকগুলো তথ্য অনুযায়ী স্কুল ব্যাংকিং এর সবচেয়ে বেশি হিসাব ও আমানত রয়েছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট হিসাবের ৬৮ দশমিক ২০ শতাংশ হিসাব রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসাব রয়েছে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকে হিসাব রয়েছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে হিসাব রয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে এগিয়ে পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে যথাক্রমে প্রথম রয়েছে বেসরকারি ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। যাতে হিসাব রয়েছে ৫ লাখ ৫০হাজার ৫৩৭; এরপর রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড যার হিসাব সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০টি; অগ্রণী ব্যাংকে হিসাব সংখ্যা ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪১১টি; এশিয়া ব্যাংকে হিসাব সংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৬টি; এবং সর্বশেষ রয়েছে রুপালী ব্যাংক যাদের হিসাব সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৬টি।
উল্লেখ্য, স্কুলের শিক্ষার্থীদের আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে স্কুল ব্যাংকিং সেবা চালু হওয়ার পর থেকেই স্কুলপড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
২০১০ সালে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সে বছর অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২৯ হাজার ৮০টি। এরপর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় দেশের ব্যাংকগুলোয় মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়। ওই সময় হিসাবগুলোয় মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিলো ৯৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মা-বাবা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে হিসাব খুলতে পারে। মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে বাংলাদেশের ৫৫টি ব্যাংকের যেকোনো শাখায় এই হিসাব খোলা যায়।
এই হিসাবে কোনো চার্জ আরোপ করা হয় না। এই কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে বেতন-ফি জমা দিতে পারবে। বৃত্তি বা উপবৃত্তির অর্থ স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় শিক্ষার্থীদের হিসাবে জমা করা যায়। সেই ক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদানকারী সরকার, আধা সরকার বা স্বায়ত্তশাসিত কিংবা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স্কুলব্যাংকিং আরও জনপ্রিয় করতে ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে যাতে আরও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে স্কুল শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করা যায়। স্কুল ব্যাংকিং বাড়লে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারীরা ১৮ বছর অতিক্রম করার পর উদ্যোক্তা হিসেবে আগামীতে গ্রাহক ও ব্যাংকের সম্পর্কের ভিত্তিকে ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।