স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর ৬টি পয়েন্টে মহামারি করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই টিসিবি’র পণ্য কিনতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্যনীয়। ক্রেতারা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হুড়মোড় করে পড়েও যাচ্ছেন কেউ কেউ। তাদের অনেকের মুখে নেই মাস্কও।
গতকাল বৃহস্পিতবার বিকেলে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পাশে এমন জটলা ও হুড়োহুড়ি দেখা যায়। এখানে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যবাহী একটি ট্রাক করে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। সেই ট্রাককে ঘিরেই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছেন সবাই।
লাইনে দাঁড়ানোদের বেশভূষা দেখে বোঝা যায়, এদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত। তাদের বেশিরভাগ আবার নারী। কিছুটা কম মূল্যে পণ্যে কিনতে এই কঠোর লকডাউনের মধ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে লকডাউন চলছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এখন ঘর হওয়াও নিষেধ। সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে সিলেটজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। তবে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের কাছে এই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। এখানে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি।
কেবল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের পাশে নয়, সিলেটে টিসিবির পণ্য বিক্রয়কারী সবগুলো ট্রাকের পাশেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত সোমবার ৫ জুলাই থেকে সিলেটে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। নগরীর রিকাবীবাজার, মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা, বন্দরসহ ৬টি এলাকায় ৬টি ট্রাকে করে ডিলাররা ৩ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন।
রিকাবীবাজার, মদিনামার্কেট, বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ট্রাকে করে ডিলার টিসিবির পণ্য বিক্রি করছেন। এই সময় শতাধিক ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন। ক্রেতাদের মালামাল দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের।
আলিয়া মাদ্রাসার পাশের টিসিবির ট্রাকের পাশে লাইনে দাঁড়ানো আফিয়া বিবি সামাজিক দুরত্ব না মানা প্রসঙ্গে বলেন, ফাঁক হয়ে দাঁড়ালে তো আমার সামনের খালি জায়গায় আরেকজন ঢুকে পড়বে। তাই মাঝখানে কোনো ফাঁক রাখিনি।
সুফিয়া খাতুন নামের আরেকজন বলেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুটা কম দামে পণ্য কিনবো বলে। এখন কত আগে পণ্য দিনে পারি সেই চেষ্টায় আছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে চাই না।
টিসিবির একটি ট্রাকের ডিলার শরদিন্দু দে বলেন, আমরা একেবারে অসহায়। বারবার বলার পর ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। দুরত্ব বজায় রাখেন না। একেবারে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দেন। এটা ক্রেতাদের মতো আমাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
সিলেট বিভাগের টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের চার জেলায় ২৫টি ট্রাকে করে টিসিবির মালামাল বিক্রি হচ্ছে এরমধ্যে সিলেট নগরীতে ৬টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির পণ্যে, প্রতি লিটার তেলের দাম ১০০ টাকায় , ডাল ৫৫ টাকা ও চিনির ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার শেরপুর টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয়ের ইনচার্জ মো. ইসমাইল মজুমদার বলেন, যে পরিমাণ পণ্য আছে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে ঈদুল আজহার ছুটিতে এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পরে আবার চলবে। আমরা সকল ডিলারকে সবাইকে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে পণ্য বিক্রি করার করার নির্দেশনা দিয়েছি।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে পণ্য ক্রয় ও বিক্রয় করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারী করতে হবে। এক্ষেত্রে পণ্য ডিলাররা কিছু করতে পারবেন না। স্থানীয় জেলা, উপজেলা প্রশাসনেরও মনিটরিং থাকে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে মানতে হবে।