চীন যখন মৃত্যুহীন একটি দিন পার করল, টানা কয়েক দিন মৃতের সংখ্যা কমেছে স্পেনে বাংলাদেশে তখন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। শুরু হয়েছে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। পাওয়া যাচ্ছে ক্লাস্টার। পরিস্থিতি যেকোনো সময় চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নারায়ণগঞ্জ সিটি, উপজেলা সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ আরো কয়েকটি এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে গাইবান্ধাকে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বড় রকমের ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করেই দেশের যেসব অঞ্চলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেসব অঞ্চল লকডাউন করা হবে এমন সিদ্ধান্তও এসেছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। কিন্তু তার পরও মানুষের চলাচল ও সমাবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না। অবনতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকাসহ সারা দেশেই ঘরে থাকার নির্দেশনা মেনে চলতে দেখা দিয়েছে ঢিলেঢালা ভাব। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে এই নির্দেশনা প্রতিপালন কার্যত উপেক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কার পাশাপাশি নতুন ক্লাস্টার তৈরির আশঙ্কা দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক।
সেই আশঙ্কা থেকে যে প্রশ্নটি সবার আগে সামনে আসে তা হচ্ছে, করোনাভাইরাস দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি কি আছে? করোনা চিকিৎসাসেবায়ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব। আবার দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালে নেওয়া রোগীদের একাংশের জন্য জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর বা কৃত্রিম পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার যন্ত্রের জন্য হাহাকার পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এখন থেকেই দেশে আইসিইউ তথা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র, ভেন্টিলেটর ও প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সেটআপের মতো জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীর জোগান বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
সবার সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, দেশের মানুষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঘরে থাকবে। নিয়ম মেনে চলবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে মানুষকে নিয়ম মানতে বাধ্য করবে।