করোনা মহামারীর এই মহাসঙ্কট ও ক্রান্তিকালেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ এবং রফতানি আয় বেড়েছে শীর্ষক সংবাদ দুটি অত্যন্ত আশা জাগানিয়া বৈকি। অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বা ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষ করে শ্রমজীবীরা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা চলতি জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। দেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি প্রবাসী আয় অতীতে কখনও আসেনি। এই পরিমাণ অর্থ আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আরও আশার কথা এই যে, বিশ্বব্যাপী করোনার এই দুঃসময়েও বাংলাদেশী শ্রমজীবীরা সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় প্রতিদিনই যেতে পারছেন কর্মসংস্থানের জন্য।
অন্যদিকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়। নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার, টাকার অঙ্কে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ। রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ, যার মধ্যে অন্যতম তৈরি পোশাক খাত। পোশাক রফতানি করে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ শতাংশ। সার্বিক রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছু কম হলেও গত জুনে রফতানি আয়ে অর্জিত হয়েছে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি, যা স্ফীত করেছে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডরকে। কঠোর লকডাউনেও কল-কারখানা সচল রাখার এটি একটি সুফল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার মজুদ এই প্রথম অতিক্রম করেছে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ঈদুল আযহার আগে আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক শ্রম সংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক হিসেবে জানা যায়, বিশ্বের ১৭৪টি দেশে অন্তত এক কোটি ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী রয়েছে, যাদের অধিকাংশই শ্রমিক। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশে। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের আসন্ন সঙ্কট-সমস্যার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবশ্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের কল্যাণে কয়েক শ’ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন অন্যতম। এর পাশাপাশি বিদেশ ফেরতদের স্বকর্মসংস্থানের জন্য সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। তবে এ নিয়ে যেন কোন নয়-ছয় তথা দুর্নীতি-অনিয়ম না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে।