স্পোর্টস ডেস্ক :
ফুটবলবিশ্বে জনপ্রিয় দলগুলোর মধ্যে শীর্ষে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। যে কারণে দল দু’টি মুখোমুখি হলেই গোটাবিশ্বে সৃষ্টি হয় উন্মাদনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত নান্দনিক সৌন্দর্যের দল দু’টির বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া হয়নি। তবে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বে আসর কোপা আমেরিকার ফাইনালে এর আগে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে কিংবদন্তি পেলে ও ম্যারাডোনার দেশ। ২০০৪ ও ২০০৭ সালের দুই ফাইনালেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল।
এরপর লম্বা সময় আর কোনো পর্যায়ের ফুটবলের ফাইনালে দেখা হয়নি দল দু’টির। অবশেষে দীর্ঘ ১৪ বছর পর আবারও স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দর্শকনন্দিত দুই দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ফুটবল আসর কোপা আমেরিকাই আরেকবার এ উপলক্ষ এনে দিয়েছে। র্অর্থাৎ এবারের ৪৭তম কোপার ফাইনাল মহারণে মুখোমুখি হচ্ছে নান্দনিক ফুটবলের পূজারি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। বাংলাদেশ সময় আগামী রবিবার সকাল ৬টায় ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে হবে লিওনেল মেসি ও নেইমারের দলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
সেমিফাইনালে ব্রাজিল ১-০ গোলে পেরুকে হারিয়ে ফাইনাল মঞ্চে আগেই পা দিয়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালের রঙিন মঞ্চে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনাও। দু’দলের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে লিওনেল মেসির দলের মুখে হাসি ফোটান গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার তিনটি শট ফিরিয়ে দিয়ে তিনিই ম্যাচের নায়ক বনে গেছেন। এর আগে ম্যাচের সপ্তম মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসির সহায়তায় প্রথমে গোল করেন স্ট্রাইকার লাউটারো মার্টিনেজ। বিরতির পর ৬১ মিনিটে উইঙ্গার লুইস ডিয়াজ একক প্রচেষ্টায় গোল করে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান। এরপর আর কোনো গোল না হলে ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে। সেখানে প্রতিপক্ষের তিন তিনটি পেনাল্টি আটকে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে উল্লাসে ভাসান গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
এই ম্যাচেও গোলে এ্যাসিস্ট করে টুর্নামেন্টে চার গোল ও পাঁচ এ্যাসিস্ট হয়ে গেছে মেসির। এ নিয়ে কোপায় আর্জেন্টিনার শেষ ১১ গোলের নয়টাতেই অবদান রাখলেন ক্ষুদে জাদুকর মেসি। তবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে মেসি নন, সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। এটা মানছেন অধিনায়ক মেসিও। ম্যাচ শেষে রেকর্ড সর্বোচ্চ ছয়বারের ফিফা সেরা তারকা বলেন, ‘আমাদের একজন এমি আছে (এমিলিয়ানো মার্টিনেজ)। সে সত্যিকার অর্থেই একজন ফেনোমেনোন। আমরা টুর্নামেন্টে সবকটি ম্যাচ খেলার লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। এখন আমরা ফাইনালে। আশা করছি শেষটাও ভাল হবে।’
উচ্ছ্বসিত মার্টিনেজ নিজেও। ২৮ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক বলেন, ‘আমি আসলে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ম্যাচটি টাইব্রেকারে গেছে, যেখানে ভাগ্যই মূল ব্যাপার। কিন্তু দিনটি ছিল আমার ও আমাদের বিজয়ের।’ ফাইনাল মঞ্চে আসার পর শিরোপা ছাড়া কিছুই ভাবছেন না এক ম্যাচেই নায়ক বনে যাওয়া এই গোলরক্ষক, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা বলে আসছি ফাইনাল খেলতে চাই। সেই ফাইনাল ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে খেলার চেয়ে ভালো কিছু আর কি হতে পারে। ব্রাজিল অবশ্যই দুর্দান্ত দল তবে আমাদের আছে বিশ্বসেরা ফুটবলার (মেসি)। আমরা জয়ের জন্যই খেলব।’
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণের আগে সঙ্গত কারণেই দু’দলের দ্বৈরথ ও পরিসংখ্যান সামনে চলে আসছে। সবদিক বিবেচনায় স্পষ্ট ফেবারিট হয়েই ফাইনাল খেলবে কোচ টিটের দল। এর আগে ব্রাজিলে যে পাঁচবার কোপার আসর হয়েছে তার প্রতিটিতেই শিরোপা জিতেছে সেলেসাওরা। এবারও ঘরের মাঠে অপরাজেয় রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখতে চায় সাম্বা ছন্দের দেশ। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে পরিসংখ্যানেও অনেক এগিয়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কোপায় দু’দলের লড়াইয়ে সর্বশেষবার আর্জেন্টিনা যখন জিতেছিল, মেসি তখন হাঁটি হাঁটি পা পা করছেন। সেটা ১৯৯১ সালের ঘটনা। সেবার দিয়াগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-২ গোলে। কিন্তু সেটা আসরের ফাইনাল ম্যাচ ছিল না। সেবার দুই গ্রুপের সেরা চারটি দল নিয়ে হয়েছিল ফাইনাল রাউন্ড। সেখানে ১৭ জুলাই ১৯৯১ সালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এরপর সবার সাথে সবার মুখোমুখি লড়াইয়ের পর সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হয় ব্রাজিল।
ফাইনাল বিবেচনা করলে দল দু’টি এবারের আগে মুখোমুখি হয়েছে ২০০৪ ও ২০০৭ সালে। ২৫ জুলাই ২০০৪ সালে পেরুতে অনুষ্ঠিত কোপার ফাইনাল ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ব্রাজিল জিতেছিল ৪-২ গোলে। এরপর ভেনিজুয়েলায় হওয়া ২০০৭ সালের ১৫ জুলাইয়ের ফাইনালে দ্বিতীয় সারির ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল পূর্ণশক্তির আর্জেন্টিনা। ১৯৯১ সালের ওই ম্যাচের পর আর্জেন্টিনা তাদের চিরপ্রতিন্দ্বীদের বিরুদ্ধে কোপায় খেলেছে আরও ছয়বার। যেখানে হেরেছে সব ম্যাচেই। এর মধ্যে নকআউট পর্বে হার চারটিতে। তবে এবার ইতিহাস বদলাতে মরিয়া আর্জেন্টিনা। তারাও যে সবশেষ ১৯ ম্যাচে অপরাজিত আছে। সর্বশেষ আর্জেন্টিনা হেরেছিল এই ব্রাজিলের কাছেই। সেটা ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে। ওই ম্যাচ ২-০ গোলে জিতে ফাইনালে ওঠার পর চ্যাম্পিয়নও হয় ব্রাজিল। এরপর দু’দলের সুপার ক্লাসিকোয় অবশ্য আর্জেন্টিনা জিতেছিল ১-০ গোলে।
কোপায় দীর্ঘ ৩০ বছর ব্রাজিলকে হারাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তবে প্রাচীন এই আসরে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ের পাল্লা ভারি আকাশী জার্সিধারীদেরই। দু’দলের ৩৩ লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার ১৫ জয়ের বিপরীতে ব্রাজিলের জয় ১০ টিতে। বাকি ৮ ম্যাচ ড্র হয়। তবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এগিয়ে ব্রাজিল। এ পর্যন্ত ১১২ ম্যাচে ব্রাজিলের ৪৬ জয়ের বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয় ৪০ ম্যাচে। ২৬ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
এদিকে প্রথম দল হিসেবে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে ইতালি। মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আসরের প্রথম সেমিফাইনালে ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-২ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এর আগে নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকে। সেখানে ম্যাচের ৬০ মিনিটে ইতালির হয়ে গোল করেন ম্যাচসেরা হওয়া উইঙ্গার ফেডেরিকো চিয়েসা। আর ৮০ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাটা স্পেনের হয়ে গোলটি পরিশোধ করেন। কিন্তু টাইব্রেকারে শেষ হাসি হেসেছেন ইতালিয়ানরা। ফাইনালে ইতালি খেলবে ইংল্যান্ড ও ডেনমার্কের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমির বিজয়ী দলের বিরুদ্ধে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আগামী রবিবার রাত ১টায়।