কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাশিয়ার জাহাজ ভিড়তে না দেওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে নানান উদ্যোগও গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
এদিকে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে আসা সেই রুশ জাহাজ এখন চীনের বন্দরে ভিড়তে চলেছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সে লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে ৯০টি জাহাজ। এর মধ্যে রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত।
বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজের তালিকা ইতোমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এই তালিকা পাঠিয়েছে। এখন থেকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে কোনো জাহাজের অনুমতি দেওয়ার আগে এই তালিকা যাচাই করে নেবে কর্তৃপক্ষ।
উরসা মেজর নামের জাহাজটিকে সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে এটি ভারতের বন্দরে ভিড়তে চেয়েছিল। সেটাও সম্ভব হয়নি। শেষে চীনের বন্দরে ভিড়তে যাচ্ছে জাহাজটি। সেখান থেকে অন্য জাহাজে করে সেই মালামাল বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজকে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, রাশিয়ার হাজার হাজার জাহাজ থাকতে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত একটি জাহাজকে কেন পাঠাল? জেনে শুনে তারা এটি করেছে। বিষয়টি শোনার পর তাজ্জব হয়ে গেছি। তবে ভবিষ্যতে কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমরা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চীন :
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার জাহাজগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না চীন। শুধুমাত্র জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি।
জাহাজে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এটা স্পষ্টও করেছেন।
তিনি বলেছেন, রাশিয়ার বেশিরভাগ জাহাজগুলোর ওপর একটি পক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, জাতিসংঘ দেয়নি। আর নিষেধাজ্ঞা যেন সাধারণ মানুষের কার্যক্রমকে কোনোভাবেই প্রভাবিত না করে, সে দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিব্রত ঢাকা :
রুশ জাহাজকে ভিড়তে না দেওয়া নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ঢাকা। জাহাজটি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে ঢাকার ওপর চাপ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই চায়নি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করুক।
তবে রূপপুর প্রকল্পের সরঞ্জাম নিয়ে আসা জাহাজটিকে ভিড়তে দেওয়ার জন্য রাশিয়ারও চাপ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত জাহাজটিকে বাংলাদেশে ভিড়তে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটাই এড়াতে চাইছে ঢাকা।
রুশ জাহাজটি এখন কোথায়?
ভারতের বন্দরে ভিড়তে না পেরে রুশটি জাহাজটি এখন চীনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিন ট্রাফিক সংস্থার ২৮ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী জাহাজটি এখন মালাক্কা প্রণালী অতিক্রম করছে। আগামী দুই একদিনের মধ্যে জাহাজটি চীনের বন্দরে ভিড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
রুশ জাহাজ নিয়ে যা হলো:
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে বেশ কয়েকটি জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়েছে। তবে সেসব জাহাজের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। এবার উরসা মেজর নামে যে জাহাজটি বাংলাদেশের ভিড়তে চেয়েছিল, সেই জাহাজটির প্রকৃত নাম স্পার্টা-৩। আর এই স্পার্টা-৩ নামের জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রাশিয়া এই জাহাজটি নাম বদলে রেখেছে উরসা মেজর। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলে যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়ার পতাকাবাহী উরসা মেজর নামে এই জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর ছেড়ে আসে। গত ২৪ ডিসেম্বর জাহাজটির বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
তবে ওই জাহাজ বাংলাদেশে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানায়, উরসা মেজর নামে জাহাজটি আসলে স্পার্টা-৩ নামে রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি জাহাজ। এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। এই জাহাজটিকেই নাম বদলে নতুন নাম উরসা মেজর হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ ছিল জাহাজটিকে ভিড়তে দেওয়ার। বিষয়টি বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। গত ২২ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ কোনো নিষিদ্ধ জাহাজ ভিড়তে দেবে না। সেদিন ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এ কথা জানিয়ে দেয় সরকার।
ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার মান্তিৎস্কি জাহাজটি ঢোকার জন্য বাংলাদেশে ভেড়ার জন্য অনুরোধও করেছিলেন। গত ২২ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে তিনি এই অনুরোধ জানান। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি।