কাজিরবাজার ডেস্ক :
হেফাজত ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের নতুন কমিটি শিগগির ঘোষিত হচ্ছে না। সবকিছু ‘পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা’ করে কমিটি গঠনের জন্য একটু সময় নিতে চাইছেন সংগঠনের ওই অংশের নেতারা। সংগঠনটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
হেফাজতের শফীপন্থী নেতারা বলছেন, তারা দ্রুতই কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। সবকিছু দেখে-শুনে দেশের আলেম-ওলামাদের জন্য যা ভালো মনে হবে তারা তা-ই করবেন। তাদের সঙ্গেই হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতাকালীন নেতাকর্মীরা আছেন বলে দাবি করছেন শফীপন্থী নেতারা।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে হেফাজত ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এর কর্তৃত্ব চলে যায় আরেক নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের হাতে। তারপর থেকে এ অরাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে সরকারবিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে রাজপথ গরম করতে দেখা যায় মামুনুল হকসহ হেফাজতের অনেক নেতাকে।
এর ধারাবাহিকতায় গত মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালায় হেফাজত। এতে প্রায় দেড় ডজন মানুষের প্রাণহানিও হয়। পরে এসব সহিংসতার ঘটনায় বাবুনগরীপন্থী হেফাজতের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের এক রিসোর্টে এক নারীসহ মামুনুল হক অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে ব্যাপক চাপে পড়ে হেফাজত।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ২৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বাবুনগরী। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই আরেক ভিডিও বার্তায় হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জিহাদী আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। যেখানে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান উপদেষ্টা ও নুরুল ইসলাম জিহাদীকে করা হয় সদস্য সচিব। আর আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হন বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।
এর কিছুদিন পরই আল্লামা আহমদ শফী ভক্ত ব্যানারে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের শফীপন্থী নেতাকর্মীরা। আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সুষ্ঠু বিচার চান তারা। শিগগির দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাদের নিয়ে হেফাজতের মূলধারার কমিটি করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হয়।
এরপর গত ৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির পদে বহাল রেখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনটির মহাসচিব পদে রাখা হয় আগের কমিটিতেও একই দায়িত্ব পালন করা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে। আর শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে ইউসুফ মাদানীকে দেয়া হয় সহকারী মহাসচিবের পদ।
এ বিষয়ে শফীপন্থী হেফাজতে ইসলামের অন্যতম উদ্যোক্তা মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহি বলেন, ‘ওরা যেই কমিটি দিয়েছে আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করছি। আমাদের কমিটি তো আছেই। একটু সংস্কার করতে হবে আর কি। এটা সময়মতো হবে। কবে নাগাদ নতুন কমিটি আসবে সেটা নির্ধারণ করা হয়নি।’
ইউসুফ মাদানীকে নিয়ে চাপা অস্বস্তি
এদিকে বাবুনগরীপন্থী জোটে ইউসুফ মাদানীর অন্তর্ভুক্তিতে কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন শফীপন্থীরা। এ বিষয়ে কোনো নেতা মন্তব্য করতে চাননি।
এ বিষয়ে মঈনুদ্দিন রুহি বলেন, ‘তিনিই (ইউসুফ মাদানী) ভালো বলতে পারবেন।’ ইউসুফ মাদানীকে মোবাইল ফোনে না পাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর ছেলে সংগঠনটির নেতা মোরশেদ বিন নূর জিহাদী বলেন, ‘তিনি (ইউসুফ মাদানী) নতুন কমিটিতে থাকতে চেয়েছেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন, তার মোবাইল বন্ধ।’
অবশ্য কমিটি ঘোষণার পরই তা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন ইউসুফ মাদানী। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি মাওলানা ইউসুফ মাদানী আজ ৭/৬/২১ ঘোষিত তথাকথিত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমার নাম দেখে আমি মর্মাহত। যারা আমার পিতাকে কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আমি কখনো এক হতে পারি না। আজকের ঘোষিত তথাকথিত হেফাজতের কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
নতুন কমিটিতে যারা থাকছেন
শফীপন্থীদের নতুন কমিটিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাদের রাখা হবে বলে জানিয়েছেন মঈনুদ্দিন রুহি। জানা গেছে, শফীপুত্র আনাস মাদানী ছাড়াও হেফাজতের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, সাবেক নায়েবে আমির মধুপুরের পীর আবুদল হামিদ নতুন কমিটিতে থাকছেন। আরও থাকছেন সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা সলিমুল্লাহ, সাবেক নায়েবে আমির রুহুল আমিন খান উজানী, আবুল হাসনাত আমিনী, আবদুল জব্বার ও সাবেক মহাসচিব মাওলানা মিনহাজ প্রমুখ।