সিয়াম সাধনার মাস

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র মাহে রমজানের ২১তম দিবস। আজ থেকে শুরু হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদবাহী রমজানুল মোবারকের সমাপনী দশক। রোজাদারদের জীবনে এ সমাপনী দশকের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এ দিনগুলোতে রয়েছে পবিত্র জুমাতুল বিদা, পবিত্র লাইলাতুল কদর ও ঈদপূর্ব রাতের মত অতিমর্যাদাপূর্ণ দিবস ও রজনী। সিয়াম সাধনার সাথে সাথে ধৈর্য, ক্ষমা, মানবপ্রেম, উদার মনোভাব ইত্যাদির উৎকর্ষ ও অনুশীলনের মাসও রমজান। ইসলামের শাশ্বত শিক্ষাও তাই। কঠিন মহূর্তেও এ কথা প্রমাণ করেছেন ইসলামের মহান নবী ও তার সাহাবায়ে কেরাম। আজ সে ইতিহাসখ্যাত মক্কা বিজয়ের দিন, ২১ রমজান। খ্রিঃ ৬৩০/৮ হিঃ সালে এ ঘটনা সংঘটিত হয়। এ সময় মুসলমানদের কাছে ছিল অসি ও মসি দু’ধারার শক্তি। প্রবল জনসম্পদ, ঈমানী দীপ্তি ও দুঃসাহসিক মনোবল। মুসলমানদের নির্যাতন করে ও হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে মক্কার কোরাইশরা এক পর্যায়ে মারাত্মক অপরাধ ও ধৃষ্টতা দেখায়। পরিণামে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মক্কা অভিযানে রওয়ানা হন।
এমনিতেই দীর্ঘ ৮ বছর ধরে স্বজনহারা মাতৃভূমি ত্যাগী মুহাজির মুসলমানদের মাঝে কুরাইশদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা টগবগ করছিল। এখন দু’শক্তি মখোমুখি প্রায়। কিন্তু এতোকিছুর পরও হযরত রাসূলে করীম (সঃ) রক্তপাত এড়িয়ে চলার ঘোষণা দিলেন। তিনি জানিয়ে দেন ঃ ‘মুসলিমবাহিনী মক্কা প্রবেশের সময় যারা সর্দার আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ, যারা কাবা অঙ্গনে আশ্রয় নেবে কিংবা নিজেদের রুদ্ধদ্বার ঘরে অবস্থান করবে তারাও নিরাপদ।’
কুরাইশরা প্রতিরোধে অগ্রসর হয়েও শেষমেশ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর ক্ষমাবাণীর সুযোগ নিল। বিজয় হলো এক প্রকার রক্তপাতশূন্য, শান্তিপূর্ণ। সামান্যটুকুন রক্তপাতের জন্য মহানবী (সঃ) সেনানায়ক হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাদিঃ)-এর কাছে রীতিমতো কৈফিয়ত তলব করেছিলেন।
রমজানের এ দিনে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পরাজিত পক্ষের সঙ্গে যে উদার আচরণ করেছিলেন তা ইতিহাসে অম্লান অক্ষয় হয়ে রয়েছে। আজকে আমাদেরও সে উদার মনোভাবাপন্ন হতে হবে। কবির ভাষায় ঃ
ও ভাই, ভয়কে মোরা জয় করিব হেসে,
গোলাগুলির বারুদ নয়; কঠিন ভালবেসে…..।’
সেদিন মহান বিজয়ী বীর রাসূলে আকরাম (সঃ) নিরহঙ্কারভাবে সাফা পাহাড়ের ঢালুতে দাঁড়ালেন যেখানে তাঁকে আট বছর আগে একদিন আবু লাহাবের প্রস্তরাঘাত সহ্য করতে হয়েছিল। সমবেত শত্রুদের কাছে তিনি জিজ্ঞেস করলেন : প্রিয় এলাকাবাসী! তোমরা আমার কাছে কি আচরণ প্রত্যাশা কর? তারা বলল : আখুন করীম ওয়া ইবনু আখিন করীম (তুমি তো আমাদের মহানুভব ভাই ও মহানুভব ভ্রাতুষ্পুত্র)। তোমার কাছ থেকে মহানুভব আচরণই কামনা করি।’ নূর নবী হযরত (সঃ) বললেন : লা তাসরীবা আলাইকুমুল ইয়াউম… আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ কিংবা অভিযোগ নেই, যাও তোমরা মুক্ত, স্বাধীন। নবী ইউসুফ যেমন তার ভাইদের ক্ষমা করেছিলেন আমিও তাই করলাম।’
দুনিয়ার ইতিহাসে এমন ক্ষমার কোন নজির নেই। এ আচরণ ইসলামের, এ শিক্ষা রমজানের, এ আদর্শ বিশ্বনবী হযরত রাসূলে করীম (সঃ)-এর। কিন্তু আজকের বিশ্বের সুপার পাওয়াররা বিজিত এলাকায় এ উদার আচরণ করে কী? আসুন না, মাহে রমজানের এ ঐতিহাসিক উদার শিক্ষা আমরা বিশ্বমানবতার স্বার্থে সর্বত্র ছড়িয়ে দেই।