বাংলাদেশে এবারে করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরনটি দেখা দিয়েছে, তা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। এবারের ভাইরাসটির সংক্রমণের তীব্রতা ও হন্তারক ক্ষমতা অনেক বেশি। যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের রীতিমতো উদ্বিগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। এতে খুব দ্রুত রোগীর ফুসফুস সংক্রমিত হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তীব্র এবং প্রায় সব রোগীর ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের। অথচ গত বছর করোনাভাইরাসের প্রথম ধরনটি তেমন তীব্র ও ভয়াবহ ছিল না। যে কারণে পরিস্থিতি ছিল মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে। সরকারী-বেসরকারী সব হাসপাতালেই এমন কি সাধারণ শয্যাও পাওয়া যাচ্ছে না। আইসিইউ বেড এবং অক্সিজেন সঙ্কটও খুব তীব্র। অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য এবং পাওয়া যায় না বললেই চলে। সংক্রমণের মাত্রা ও ভয়াবহতা দেখে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের করোনাভাইরাসটির ধরন অনেকটা মিলে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে, যার সংক্রমণ ও হন্তারক ক্ষমতা অনেক বেশি। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য এবং ব্রাজিলের করোনারভাইরাসের নমুনাও পাওয়া গেছে। তিনটি নমুনাই অতি দ্রুত ছড়ায় এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ফলে দিন দিন পরিস্থিতি রীতিমতো সঙ্গিন ও সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠছে। এ থেকে আপাতত পরিত্রাণ পেতে সবাইকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সরকারকেও প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তথা যুদ্ধ করার জন্য বিশ্বের কোন দেশই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি করোনার আঁতুরঘর বলে খ্যাত চীনের হুবেই প্রদেশের উহানও নয়। চীন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পরাশক্তি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক- উভয় দিক থেকেই। আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গেও। সুতরাং করোনা বা কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তেও সময় লাগেনি। তবে বিশ্ববাসী এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষা কোনটাই গড়ে তুলতে পারেনি যথাসময়ে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা নীতি সর্বদাই মেনে চলতে হবে- ঘরে ও বাইরে সর্বত্র। হাসপাতাল কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে যথাযথভাবে। জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন ও পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে প্রতিকূল পরিস্থিতির।