কবে লাঘব হবে বাদেপাশা ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের দুর্ভোগ। একটি মাত্র বেহাল সড়কের কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ও ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ১৪/১৫টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাদেপাশা ইউনিয়নের উত্তর আলমপুর-মাসুরা গ্রামের রাস্তা প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি প্রায় তিন যুগেও।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বাদেপাশা ইউনিয়নের উত্তর আলমপুর, কোনাগাঁও, কুলিয়া, কাটাখালেরপার, কেওট কোনা, দক্ষিণ আলমপুর, ছেগা, সোনারপাড়া, কালাইম, সুপাটেক, রাংজিওল, শান্তিরবাজার, ইসলামপুর, বাদেপাশা, বাগলা গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ জনগণের একমাত্র চলাচলে রাস্তা উত্তর আলমপুর-মাসুরা রাস্তা। যার দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ছিলো ২০ ফুট। এই রাস্তার অর্ধকিলোমিটার বাদেপাশা ইউনিয়নে এবং আড়াই কিলোমিটার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের আওতাধিন হওয়ায় কোন চেয়ারম্যানই এই রাস্তা সংস্কারে এগিয়ে আসেননি। উত্তর আলমপুর খালের ভাঙ্গনে সড়কের একের পর এক অংশ ক্রমেই বিলীন হচ্ছে। ২০ ফুট প্রস্থ সড়ক এখন পায়ে হাঁটা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায় না। যে রাস্তা দিয়ে এক সময় অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস চলাচল করতে সেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এসব গ্রামের শিক্ষার্থীদেরকে ভাদেশ্বর কলেজ, ভাদেশ্বর মডেল মাদ্রাসা, ভাদেশ্বর মহিলা কলেজ, ভাদেশ্বর হাফিজায় মাদরাসা, নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং ঢাকাদক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়, গোলাপগঞ্জ এমসি একাডেমীতে যেতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। বন্যা ও বৃষ্টি হলে সে সময় শিক্ষার্থীরা রাস্তার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ জনগণ অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে পায়ে হেটে উপজেলা সদর ও জেলা শহরে যাতায়াত করছেন।
গ্রামগুলোতে কোন হাসপাতাল না থাকায় গ্রামের মানুষকে চিকিৎসার জন্য ভাদেশ্বর, ঢাকাদক্ষিণ, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট শহরে আসতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে বাঁশের মাচাঙ্গ বা ফলো দিয়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় হাসপাতালে পৌঁছার আগেই রোগী রাস্তাতেই মারা যান। সম্প্রতি উত্তর আলমপুর গ্রামের মরহুম আমিন আলী স্ট্রোক করলে তাকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় উক্ত রাস্তাতেই তিনি মারা যান। রাস্তার কারণে গর্ভবতী মায়েরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর ফসল কাটার মৌসুমে হাওর থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল রাস্তা না থাকায় কাঁধে বহন করে ঘরে তুলেন। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই অনেক কৃষক তাদের কৃষি জমি পতিত রেখে দেন। এমনকি ফসল তোলার পর তা রাস্তার কারণে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। গ্রামের কোন বাড়িতে আগুন লাগলে রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এতে অনেক পরিবারই।
গ্রামগুলোর প্রতিটি পরিবার থেকে এক/দুই জন এমনকি পরিবারের সকল সদস্য প্রবাসে আছেন। গ্রামগুলোতে কোন ব্যাংকের শাখা না থাকায় প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ উত্তোলন করতে গ্রামবাসীকে ভাদেশ্বর, ঢাকাদক্ষিণ ও গোলাপগঞ্জ যেতে হয়। রাস্তা বেহাল অবস্থার কারণে অনেক সময় টাকা নিয়ে ফেরার পথে ডাকাতের কবলে পড়তে হয়। এমনকি ইতিমধ্যে এই রাস্তায় অনেক মহিলা ধর্ষণে শিকার হয়েছেন।
সংস্কারের অভাবে রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় টহল পুলিশের গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না। এতে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। (খবর সংবাদদাতার)