পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস : নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ

7

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা, প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত প্রতারণা কিংবা গুজব বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক ও ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, এক চিকিৎসক দম্পতির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে এমবিবিএস পরীক্ষার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র। এবারে সেই চিকিৎসক দম্পতি ও আরও পাঁচ চিকিৎসকসহ চক্রের ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। চক্রটি ইতোমধ্যেই ১০ বার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা এমনটিও জানা যাচ্ছে। রোববার দুপুরে সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া।
এমন ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। জানা যায়, মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার সূত্রধরে অভিযানে নামে সিআইডি। গত ৩০ জুলাই থেকে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় টানা ১০ দিন অভিযান চালানো হয়। আর গ্রেপ্তার করা হয় এক চিকিৎসক দম্পতিসহ সাত ডাক্তারকে। চক্রের আরও পাঁচ সদস্যসহ মোট ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আর তাদের কাছে পাওয়া গেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল ফোন, চারটি ল্যাপটপ, ফাঁস করা প্রশ্নপত্র বিক্রির দুই লাখ ১১ হাজার টাকা, ১৫ হাজার ১০০ টাকার বিদেশি মুদ্রা (থাই বাথ)। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫টি চেকবই, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও ভর্তির এডমিট কার্ড। গ্রেপ্তারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্যও মিলেছে।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। ফলে এই ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে। এছাড়া প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানো, প্রতারণাসহ নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বারবার। এছাড়া নানা সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে, শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তার মতো সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণিরও যুক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, সেটি ভাবনার অবকাশ রাখে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কিংবা প্রশ্নফাঁসের গুজব শুধু ভীতিপ্রদই নয়, বরং সমাজের আশঙ্কাজনক অবক্ষয়েরও নির্দেশক। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তারা একদিকে যেমন জাতির মেধাবী সন্তানদের বঞ্চিত করে, অন্যদিকে, হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। সঙ্গত কারণেই দেশকে, সমাজকে, এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। আর প্রশ্নফাঁস রোধ কিংবা এ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের গুজব রোধে কঠোর হওয়ারও বিকল্প নেই। এমনটি আলোচনায় এসেছে যে, পাবলিক পরীক্ষা সামনে রেখে প্রশ্নফাঁস করার সঙ্গে জড়িতরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রগুলো গুজব ছড়িয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করে। এসব চক্র শিক্ষা খাতের ক্যানসার। তাদের নির্মূল করতে কাজ চলছে বলেও জানা যাচ্ছে- যা আশাব্যঞ্জক। এসব চক্রের অপতৎপরতা রুখতে প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে হবে।
মনে রাখা দরকার, দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। অথচ প্রশ্নফাঁসের ঘটনা কতটা ভয়ানক হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্নফাঁসের চেষ্টা বা কেউ গুজব ছড়াতে চেষ্টা করলে তা রোধ করতে হবে। প্রশ্নফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।