বাঙালির বিজয়ের দিন

10

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাদিক বছর পূর্বে এই দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছিল যুদ্ধ শেষের গান। বাঙালি শব্দসৈনিকরা সমবেত কন্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন, ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই, বাংলার ঘরে-ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে’। সেই আলোর ঝর্ণাধারায় প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিল বিশ্ব মানচিত্রে এক নতুন দেশ-বাংলাদেশ। আজ সেই দিন, বাঙালির গৌরবের, আনন্দের, অহঙ্কারের, আত্মমর্যাদার ও আত্মোপলব্ধির, বিজয়ের গৌরবে-গৌরবাম্বিত হওয়ার দিন।
আজ আলোকিত বিজয় দিবস এর মানেই বাঙালি জাতির নব জন্ম কাল। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, জামায়াত-শিবির (তৎকালিন ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্র সংস্থা) বাহিনীকে চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত করার দিণ। আর জাতি হিসেবে বাঙালির সহস্র বছরের সাধনা শেষে অর্জিত চূড়ান্ত বিজয়ের দিন। স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দিন। বিজয়ের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন। তাদের রক্তের অবদানে মুক্ত হয়েছিল স্বদেশে উড়ছে পত-পত করে স্বাধীন দেশের লাল-সবুজ পতাকা। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসীম ত্যাগ আর সাহসিকতার ফসল ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অকুতোভয় সংগ্রাম, রাজনৈতিক নির্দেশনায় লড়াই করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, যাদের অবদান এই স্বাধীন দেশ।
একাত্তরের ২৫ মার্চ গভীর রাতে কা-পুরুষের মতো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর মেশিন গান, কামাল, ট্যাঙ্ক দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুরু করেছিল ঢাকাসহ সারাদেশে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদষ্টা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে হাতে তুলে নিয়েছিল প্রতিরোধের অস্ত্র। গড়ে তুলেছিল স্থানে-স্থানে দুর্গ। বাঙালি জাতি সম্মুখ সমরে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছিল। সেদিন কেবল পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নয়, তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে ও লড়াই করতে হয়েছে। এরা যুদ্ধকালিন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পথ দেখিয়ে দিয়ে গ্রাম, শহর, নদী-বন্দর, বাসা-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ ও গনহত্যাসহ অমানুষিক সব কর্মকান্ড সংঘটিত করেছিল।
বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে। বীর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভারতীয় যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড হামলায় হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রা পর্যদস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৬ ডিসেম্বর বিকালে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। দখলদার মুক্ত হয় বাংলাদেশ। বাঙালি জাতি রক্তাক্ত প্রান্তরে নিঃশ্বাস নেয় প্রাণভরে।