মধ্যম আয়ের দেশের পথে বাংলাদেশ, বাজার ধরে রাখতে চলছে দর কষাকষি

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মধ্যম আয়ের দেশের পথে বাংলাদেশ। আগামী বছরের প্রথম দিকে এই ঘোষণা দেওয়ার কথা জাতিসংঘের। আবার তিন বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সালে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। এটি একদিকে যেমন বড় প্রাপ্তি, তেমনি কিছুটা আশঙ্কারও। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ তখন বিশেষ বাজার প্রবেশাধিকার, অল্প সুদে ঋণসহ আরও কিছু সুবিধা পাবে না। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের পরও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই সুবিধা কীভাবে অব্যাহত রাখা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন নীতি-নির্ধারকরা। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) গত অক্টোবরে একটি প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ। যদি সব রাষ্ট্র ওই প্রস্তাব মেনে নেয় তবে বাংলাদেশসহ সকল স্বল্প আয়ের দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার ১২ বছর পরও আগের সব সুবিধা পাবে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই সুবিধা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং সব স্বল্পোন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। সব এলডিসির পক্ষে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।’
এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি ডিসেম্বরের সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টি আলোচনা হবে। যদি আমরা সেখানে একটি সিদ্ধান্ত পেয়ে যাই তবে আগামী মন্ত্রী সভায় এটি পাসের জন্য উপস্থাপন করা হবে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘সব স্বল্পোন্নত দেশ এ প্রস্তাব সমর্থন করেছে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা করছি। আমরা আশাবাদী।’
এই সুবিধা ১২ বছরের জন্য থাকবে নাকি আরও কমে যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আলোচনা শেষে বলা যাবে। আমাদের দাবি হচ্ছে এটি ১২ বছর থাকলে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবদিক থেকে সুবিধা পাবে। তবে অন্য দেশগুলোকে এ প্রস্তাবে রাজি করানো কঠিন।’
এ বিষয়ে জেনেভাতে কমার্সিয়াল কাউন্সিলর দেবব্রত চক্রবর্তী জানান, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নির্বিঘ্ন ও টেকসই গ্র্যাজুয়েশনে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে ২০০৪ এবং ২০১২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দুটি রেজুলেশন গৃহীত হয়। এছাড়া চতুর্থ জাতিসংঘ এলডিসি সম্মেলন বা ইস্তানবুল প্রোগ্রামের বৈশ্বিক একটি লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা। কিন্তু সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ হয়নি। ফলে এখন যে দেশগুলো আগামীতে গ্র্যাজুয়েশন করবে তাদের নির্বিঘ্ন গ্র্যাজুয়েশন নিশ্চিত করা এবং অন্য এলডিসিদের গ্র্যাজুয়েশনের পথে উৎসাহিত করার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বর্তমানে এলডিসিদের প্রাপ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখা দরকার।’
আগামী বছরের ডব্লিউটিও মিনিস্টারিয়াল এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন দেবব্রত।
ডব্লিউটিও-এর ট্রিপস চুক্তির আওতায় এলডিসিগুলোর সাধারণ অব্যাহতির বর্ধিত মেয়াদ ২০২১-এর জুলাইতে শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানেও আমরা দর কষাকষি করছি যাতে নির্দিষ্ট অল্প কিছু সময়ের বদলে সাধারণ অব্যাহতির মেয়াদ এলডিসি হিসেবে পুরোটা সময় এবং গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী আরও কিছু বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।’
উল্লেখ্য, ট্রিপস চুক্তির আওতায় বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওষুধ শিল্প বিশেষ সুবিধা পাবে। এ সুবিধা ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকার কথা আছে। তবে তার আগে এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশন হলে সুবিধাটি থাকবে না। কিন্তু যদি ট্রিপস চুক্তির সাধারণ অব্যাহতির মেয়াদ ২০২১ সালের ১ জুলাইর পর না বাড়ে তবে বাকি সব সুবিধাও ২০২১-এর জুলাইর পর রদ হবে। তখন বই, সফটওয়্যার থেকে শুরু করে মেধাস্বত্ব আছে এমন সেবা ও পণ্যের ক্ষেত্রে ট্রিপস-এর বাধ্যবাধকতা বলবৎ হবে।
দেবব্রত বলেন, ‘১৯৯৫ সালে ডব্লিওটিও-এর জন্মলগ্ন থেকে ১০ বছরের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো ট্রিপস-এর আওতায় বিশেষ অব্যাহতির সুবিধা ভোগ করছে, যা ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়।’