স্পোর্টস ডেস্ক :
নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে লেস্টার সিটিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ঘরের মাঠে নিজেদের টানা অপরাজিত থাকার নতুন রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে ইনজুরি জর্জরিত লিভারপুল। রোববার অনুষ্ঠিত ম্যাচটি জিতে অলরেডরা এই নিয়ে টানা ৬৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছে। এর মধ্যে তারা জিতেছে ৫৩ ম্যাচে এবং ১১ ম্যাচে করেছে ড্র।
১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে লিভারপুলের আগের রেকর্ড ৬৩ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা থেমেছিল লেস্টার সিটির বিপক্ষে। ৩৯ বছর পর সেই লেস্টারের বিপক্ষে জিতেই ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে জুর্গেন ক্লপের দল। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারের পর লীগে নিজেদের মাটিতে আর হারের মুখ দেখেনি ক্লাবটি।
মূল একাদশের ৬ জন খেলোয়াড়কে ছাড়া কোচ জুর্গেন ক্লপকে একাদশ সাজাতে হয়েছিল। ইনজুরি ও করোনাভাইরাস সমস্যায় জর্জরিত লিভারপুল এই ম্যাচে অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন, ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড, মোহামেদ সালাহ, থিয়াগো আলকান্তারারা ও জো গোমেজকে পায়নি। আগে থেকেই মাঠের বাইরে আছেন ভার্জিল ফন ডাইক। তারপরও লিভারপুলের আগ্রাসী খেলার ধরণ এতটুকু বদলায়নি। দলের মূল খেলোয়াড়দের অভাব অন্যরা বুঝতেই দেননি।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারতো স্বাগতিকরা। ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের বদলে খেলতে নামা জেমস মিলনারের কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে সাদিও মানের হেড করলেও তা পাশের জালে লাগে।
২১ মিনিটের মাথায় জেমস মিলনারের কর্নার কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো হেড করে নিজের জালে ঢুকিয়ে দেন লেস্টার সিটির সেন্টারব্যাক জনি ইভান্স। একবার লিড নেয়ার পর লিভারপুল আর প্রতিপক্ষকে ছাড় দেয়নি।
খেলার ৪১ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে লেফটব্যাক অ্যান্ড্রু রবার্টসনের মাপা এক ক্রসে বল পেয়ে হেডে বল জালে পাঠিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হেডে বল জালে ডিয়েগো জোতা। ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে নিজের প্রথম চার ম্যাচে চার গোল করা প্রথম লিভারপুলের সর্বপ্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অনন্য এক মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এই পর্তুগিজ উইঙ্গার। সব মিলিয়ে অলরেডদের ১২ ম্যাচ খেলে এই তারকা ৮ গোল করে ফেললেন। অথচ জোতা দলে আসার পর বলা হয়েছিল লিভারপুলের বিখ্যাত আক্রমণ-ত্রয়ীর কারণে তাঁকে বেঞ্চে বসেই সময় পার করতে হবে। কিন্তু এখন তার দুর্দান্ত ফর্ম নিঃসন্দেহে জুর্গেন ক্লপকে মধুর সমস্যায় ফেলে দিতে বাধ্য।
বিরতির পর ৫৬ মিনিটে গোল পেতে পারতেন সাদিও মানে। তবে সেনেগালের এই ফরোয়ার্ডের শট ফিরিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি স্মাইকেল। এই ম্যাচে গোল না পেলেও লিভারপুলের হয়ে মানে অন্যরকম এক গৌরব বহন করে চলেছেন। ২০১৬ সালে সাউদাম্পটন থেকে লিভারপুলে আসার পর তিনি এখনো অ্যানফিল্ডে কোনো লীগ ম্যাচই হারেননি।
৫৮ মিনিট পর আবারো আত্মঘাতী গোল করতে বসেছিলেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার ইভান্স। এবার অবশ্য তার হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৭৯ মিনিটে ৫ সেকেন্ডের ব্যবধানে রবার্তো ফিরমিনো ও সাদিও মানের শট বারপোস্টে লেগে ফেরত না আসলে লিভারপুল আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারতো।
ম্যাচের ৮৬ মিনিটে মিলনারের আরেকটি কর্নারে লাফিয়ে হেডে বল জালে পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবার্তো ফিরমিনো। এই ম্যাচে দুইবার বল পোস্টে লাগানোর পর শেষ পর্যন্ত তিনি গোলের দেখা পান। আর তাতেই সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিভারপুল।
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সপ্তাহ শুরু করেছিল ব্রেন্ডন রজার্সের লেস্টার সিটি। কিন্তু সাবেক ক্লাব লিভারপুলের বিপক্ষে রজার্সের দল মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে লিভারপুল জিতে নিয়েছে ম্যাচ।
৯ ম্যাচে ৬ জয় ও ২ ড্রয়ে লিভারপুল ২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে অবস্থান করছে। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে এগিয়ে শীর্ষে আছে টটেনহ্যাম হটস্পার। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে চেলসি তিনে ও লেস্টার সিটি চার নম্বরে আছে।
দিনের অন্য ম্যাচে ফুলহ্যামের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জেতা এভারটন ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। সমান পয়েন্ট পেলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় পাঁচ নম্বরে আছে সাউদাম্পটন। শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের আটে আছে ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড। অপরদিকে, লিডস ইউনাইটেডের মাঠে গোলশূন্য ড্র করা আর্সেনাল ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম স্থানে রয়েছে। ১১ পয়েন্ট নিয়ে লিডসের অবস্থান ১৪তম।