৩ আদালতে খারিজ, ভোট গণনা স্থগিতের আবেদন ॥ ভোট অবৈধ : ট্রাম্প ॥ ধৈর্য ধরুন, আমরাই জিতে যাচ্ছি : বাইডেন

79

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ট্রাম্প রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তিনি প্রতিনিয়ত ভুল তথ্য তুলে ধরেন। একের পর এক অসত্য তথ্য তুলে ধরায় ট্রাম্পের ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার মাঝপথেই বন্ধ করে দেয় বেশ কয়েকটি মার্কিন টিভি চ্যানেল। এদিকে মার্কিন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে মামলা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন আদালতে তা খারিজ হয়ে গেছে। এর আগে তিনি পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, জর্জিয়া ও এ্যারিজোনায় কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট গণনা বন্ধ করতে মামলা করেন। পরে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও জর্জিয়ার আদালত তা খারিজ করে দেয়। আর নির্বাচনে পোস্টাল ভোট গণনা চলার মধ্যে ট্রাম্পের ‘অবৈধ’ ভোট গোনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও নির্বাচক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটে অনিয়মের কোন প্রমাণ নেই। যদিও পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় রিপাবলিকান সমর্থকরা সশস্ত্র হামলা চালায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরাপত্তা বাহিনী ডেকে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এ্যারিজোনায়ও ট্রাম্প সমর্থকদের সশস্ত্র বিক্ষোভ দেখা যায়। ফিনিক্সের মেরিকোপা কাউন্টির একটি ভোট গণনা কেন্দ্রে সশস্ত্র বিক্ষোভ করে ট্রাম্প সমর্থকরা। অস্ত্র হাতে তারা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ‘ভোট চুরি বন্ধ করতে হবে’ বলে শ্লোগান দেয়। কেন্দ্রের বাইরে রিপাবলিকান সমর্থকরা অবস্থান নেয়ায় ভোট গণনা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। এছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী বিক্ষোভ ও সহিংসতার কবলে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন তার সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা জিতে যাচ্ছি। তবে আমাদের আরও ধৈর্য ধরতে হবে। প্রতিটি ভোট গণনা শেষ করতে হবে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের পর থেকে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে ভোটগণনা বন্ধের জন্য ট্রাম্প ও রিপাবলিকান শিবিরের চালানো চেষ্টা রুখে দিয়েছে স্থানীয় আদালত। দুই আদালতে ভিন্ন ভিন্ন শুনানি শেষে এ রায় দেয়া হয়। এর আগে জর্জিয়ার আদালতেও ট্রাম্প শিবিরের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। পেনসিলভানিয়ার ভোট গণনা থামাতে অঙ্গরাজ্যটির আদালতে আবেদন জানিয়েছিল ট্রাম্পের প্রচার শিবির। শুরুতে অভিযোগ করা হয়, গণনা প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের কোন পর্যবেক্ষককে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শুনানি চলার সময় ট্রাম্প শিবির স্বীকার করেছে, পেনসিলভানিয়া কনভেনশন সেন্টারে ভোট পর্যবেক্ষকরা গণনা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। ফিলাডেলফিয়া সিটি কমিশনার জানান, কনভেনশন সেন্টারটিতে ট্রাম্প শিবিরের অন্তত ৩৪ জন পর্যবেক্ষক রয়েছেন। শুনানি শেষে বিচারপতি পল এস ডায়মন্ড ট্রাম্প শিবিরের ভোট গণনা বন্ধের আবেদন খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, গণনার সময় কোন্ পক্ষের কতজন পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকবেন তা নিয়ে দুই দলের সমঝোতা হওয়া উচিত। ব্যালট গণনার সময় কোন দলেরই ৬০ জনের বেশি পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকা উচিত হবে না। মিশিগানে গণনাকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত না থাকা পর্যন্ত গণনা স্থগিতের আবেদন জানিয়েছিল রিপাবলিকান শিবির। একইসঙ্গে ভোট গণনার আগে যেখানে মেইল ইন ব্যালটের ড্রপ বক্স জমা দেয়া হয়েছে সেখানকার ভিডিও ফুটেজ রিপাবলিকানদের কাছে জমা দিতে বলা হয়। মিশিগান আদালতের বিচারপতি সিনথিয়া স্টিফেন্স সে আবেদন খারিজ করে দেয়। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, প্রচারশিবির অনেক দেরি করে, ভোট গোনার একেবারে শেষ সময় গণনা বন্ধের আবেদন করেছে। তাছাড়া মামলায় ভুল কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে (মিশিগান অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জসলিন বেনসন) জানিয়ে বিচারক বলেন, স্থানীয় ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় ওই কর্মকর্তার কোন হাত নেই। যদিও তিনি অঙ্গরাজ্যের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা। বেনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দুই দলের পর্যবেক্ষক এবং চ্যালেঞ্জকারীদের ভোটিং প্রক্রিয়া দেখতে না দিয়েই ডাকযোগের ব্যালট গণনা করতে দিয়েছেন। এভাবে তিনি মিশিগানের ভোটারদের সুষ্ঠু এবং বৈধ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছেন। বেনসন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প শিবির বলছে, আরও রিপাবলিকান ভোট পর্যবেক্ষককে গণনা প্রক্রিয়া দেখতে না দেয়া পর্যন্ত ভোট গণনা বন্ধ থাকা উচিত।
জর্জিয়ায় এগিয়ে বাইডেন : নির্বাচনের ফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গরাজ্য জর্জিয়ায় বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। ট্রাম্প যদি পুনঃনির্বাচিত হতে চান, জর্জিয়ায় বিজয়ী হওয়া তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেখানে বাইডেন এগিয়ে যাওয়ার পর ট্রাম্পের জয়লাভের পথ অনেক সঙ্কুচিত হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, জর্জিয়ায় এক শতাংশ ভোট গণনা বাকি আছে। এগুলো যেহেতু ডাকযোগে দেয়া ভোট, তাই এগুলো বেশিরভাগই জো বাইডেনের পক্ষে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু জর্জিয়া নয়, অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়াতেও ট্রাম্প বাইডেনের দিক থেকে চাপের মুখে আছেন। নির্বাচনের দিন রাতে সেখানে ভোট গণনায় তিনি প্রায় ৫ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন সেই ব্যবধান এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৮ হাজারে। আরও দুটি অঙ্গরাজ্য এ্যারিজোনা এবং নেভাডাতেও বাইডেন এগিয়ে আছেন। যদি কেবল ওই দুই অঙ্গরাজ্যে বাইডেন জিতে যান তাহলেও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে যে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট দরকার তা নিশ্চিত করে ফেলবেন।
চূড়ান্ত ফল আসবে কখন? : নির্বাচনের পর তিনদিন পার হলেও চূড়ান্ত ফল কখন আসবে তা স্পষ্ট হয়নি। ভোট গণনা এখনও চলছে, মামলা চলছে আর পুরো যুক্তরাষ্ট্র অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে অস্থির হয়ে আছে। মাত্র পাঁচ অঙ্গরাজ্যের ফল জানা বাকি। গণনা চলা এই ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোতেই আটকে আছে নির্বাচনের ফল। অধিকাংশ ভোট গোনা হয়ে যাওয়ার পরও কোনটিতে কে জিততে চলেছেন তা বলার সময় এখনও হয়নি, এমনই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে। সবার চোখ এখন পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, এ্যারিজোনা ও নেভাডার দিকে। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হতাশ দেখাচ্ছিল। বুধবার সকালের পর থেকে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে এসে ট্রাম্প কোন প্রমাণ ছাড়াই ফের অভিযোগ করেন, তিনি ইলেক্টোরাল প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ সময় সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নও গ্রহণ করেননি। রিপাবলিকান ভোটারদের নির্বাচনের দিন ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করেছিলেন ট্রাম্প, অপরদিকে করোনা মহামারীর কারণে বাইডেন তার সমর্থকদের ডাকযোগে আগাম ভোট দিতে বলেছিলেন। ফলে এখন ডাকযোগে আসা ভোটের গণনা চলাকালে বাইডেনের পাল্লা ভারি হতে থাকলেও এর কারণ স্বীকার না করে উল্টো কারচুপির অভিযোগ তুলছেন ট্রাম্প। এক টুইটে তার অভিযোগ নিয়ে সুপ্রীমকোর্র্টে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। অপরদিকে নিজের টুইটে বাইডেন সমর্থকদের শান্ত থেকে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন। এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল কখন আসবে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। ভোটের ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ট্রাম্পের জয়ের পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে। কোন মামলার কারণে নির্বাচনের ফল কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে যায় কিনা, অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা মার্কিন নাগরিকরা এখন এমন ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।
কারচুপির অভিযোগ রিপাবলিকানদের : টানটান উত্তেজনার মধ্যেই নেভাডা অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা এবার ৩ হাজারের বেশি ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের কাছে নেভাডা রিপাবলিকান পার্টি একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে, যেখানে ‘নির্বাচন কারচুপির অন্তত ৩ হাজার ৬২টি ঘটনা’ তুলে ধরা হয়েছে। নেভাডায় এখনও ভোট গণনা চলছে, যার সর্বশেষ ফল অনুযায়ী বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ১১ হাজার ৪০০ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। ঐ অঙ্গরাজ্যের ৮৯ শতাংশ ব্যালট এখন পর্যন্ত গণনা শেষ হয়েছে। পার্টির পক্ষ থেকে এক টুইটে অভিযোগ তোলা হয় অঙ্গরাজ্য থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর যারা ভোট দিয়েছেন, তারা কারচুপির সঙ্গে জড়িত।
আবার ভোট গণনা শুরু : পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে ভোট গণনা আবার শুরু হয়েছে। এর আগে আইনগত জটিলতার কারণে গণনা বন্ধ রাখা হয়েছিল। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, গণনা ও যাচাই কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের থেকে ছয় ফুট দূরত্বে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার দলের পর্যবেক্ষকদের থাকতে দিতে হবে। পেনসিলভানিয়ায় ২০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। যেজন্য সেখানে কি হয় সে সম্পর্কে দুইপক্ষের আগ্রহ সমান। পেনসিলভানিয়ায় বাইডেন জিতে গেলে তিনি নিশ্চিতভাবেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের বিজয় হলে প্রেসিডেন্সি ধরে রাখার কাজ তারজন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। পেনসিলভানিয়ায় এখনও প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ব্যালট গণনার কাজ বাকি রয়েছে।
অনিয়মের কোন প্রমাণ নেই : পোস্টাল ভোট গণনা চলার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘অবৈধ’ ভোট গোনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও নির্বাচক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটে অনিয়মের কোন প্রমাণ নেই। বিবিসির রেডিও ফাইভ-লাইভ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশন ‘দ্য অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপে (ওএসসিই)-এর মুখপাত্রের কাছে ট্রাম্পের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনিয়মের কোন প্রমাণ নেই।
তিন অঙ্গরাজ্যে জয় ছিনিয়ে নিলেন বাইডেন : নির্বাচনে ফল নির্ধারণী ক্ষমতা রয়েছে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের। ব্যাটলগ্রাউন্ড নামে পরিচিত এসব অঙ্গরাজ্যে এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। এর মধ্যে গত নির্বাচনে ট্রাম্পের জেতা তিনটি অঙ্গরাজ্যে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন বাইডেন। ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, ইলিনয়েস, ভার্জিনিয়ার মতো ব্যাটলগ্রাউন্ডে বুধবারই জয় নিশ্চিত করেছেন বাইডেন। বিপরীতে টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও ওহাইওতে জয় তুলে নিয়েছে রিপাবলিকানরা। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মিশিগান, উইসকনসিন ও এ্যারিজোনার জয় প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছিল ট্রাম্পকে। এবার ডেমোক্র্যাটদের কাছে এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হারিয়েছেন তিনি। উইসকনসিনে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বাইডেন। ৯৯ শতাংশ ভোট গণনায় তিনি পেয়েছেন ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৫৪২ ভোট (৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ)। ট্রাম্প পেয়েছেন ১৬ লাখ ১০ হাজার ৭ ভোট (৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ)। এ্যারিজোনায় প্রায় দুইযুগ পর জিতেছে ডেমোক্র্যাটরা। সেখানে ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ২১৩ ভোট (৫০ দশমিক ৭ শতাংশ) পেয়েছেন বাইডেন। রিপাবলিকান ঘাঁটিতে ট্রাম্প পেয়েছেন ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪০ ভোট (৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ)। অর্থাৎ প্রায় ৭৯ হাজার ভোটে জয় পেয়েছে ডেমোক্র্যাট শিবির। মিশিগানে শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছেন বাইডেন। ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষেও এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। ৯৪ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায় ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন বাইডেন। শেষ পর্যন্ত ওই অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন তিনি। এ ব্যাটলগ্রাউন্ডে বাইডেন পেয়েছেন ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ ভোট (৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ)। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৬ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ ভোট (৪৮ শতাংশ)। মিশিগানে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ১৬টি, উইসকনসিনে ১০টি ও এ্যারিজোনায় ১১টি। অর্থাৎ এ তিনটি অঙ্গরাজ্যের মোট ৩৭টি ইলেক্টোরাল ভোট হারিয়েছে রিপাবলিকানরা।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে আটক ২ : পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে থেকে দু’জনকে আটক করেছে মার্কিন পুলিশ। এবারের মার্কিন নির্বাচনের ফল যে পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের ওপর নির্ভর করছে পেনসিলভানিয়া তার মধ্যে একটি। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোয় এখন ভোট গণনা চলছে। পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প বাইডেনের থেকে কিছুটা এগিয়ে আছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম ফিলাডেলফিয়া ইনকুয়েরার বলছে, স্থানীয় সময় রাত ১০টার পরে ফিলাডেলফিয়া কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্রের খবর বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে সিক্স এবিসি এ্যাকশন নিউজের প্রাথমিক খবর অনুযায়ী সশস্ত্র একটি দল ওই ভোটকেন্দ্রের দিকে যাওয়ার কারণে ওই দু’জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। নির্বাচনের দিন থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর টুইট করছেন। পিছিয়ে পড়ার পর থেকে তিনি টুইটে ভোট গণনা বন্ধের দাবি করেছেন। কোন প্রমাণ ছাড়াই ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছেন। ফেসবুক ট্রাম্প সমর্থক দলের ‘স্টপ এ্যান্ড স্টিল’ গ্রুপটি বন্ধ করে দেয়। ওই দু’জনকে আটক করার বিষয়ে ফিলাডেলফিয়া পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।
ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ : নির্বাচনের রাতের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছিলেন ট্রাম্প। এসেই স্বকীয় ভঙ্গিতে শুরু করলেন অভিযোগ। বেশিরভাগই অসত্য। ভুল তথ্য দাখিল করে ক্রমাগত আঙ্গুল তুলে গেলেন ডেমোক্র্যাটদের দিকে। তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বাইডেনের দিকে। অগত্যা ভাষণের মাঝপথেই সম্প্রচার বন্ধ করে দিল বহু টিভি চ্যানেল। ১৭ মিনিটের ভাষণ ছিল ট্রাম্পের। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, বাইডেন ‘বেআইনী ব্যালট’ ব্যবহার করে ‘আমাদের থেকে ভোট চুরি করেছেন’। এই ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে এমএসএনবিসি চ্যানেলের উপস্থাপক বললেন, আবার আমরা একটি অবাঞ্ছিত জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য শুধু থামাতে হচ্ছে না, শুধরেও দিতে হচ্ছে। এনবিসি, এবিসি নিউজও ট্রাম্পের ভাষণের সরাসরি সম্প্রচার মাঝপথে থামিয়ে দেয়। সিএনএনের উপস্থাপক জেক টেপার বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি দুঃখের দিন, যে তাদের প্রেসিডেন্ট এসব বলছেন। বিপক্ষের বিরুদ্ধে ভোটচুরির মিথ্যে অভিযোগ আনছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে তার মন্তব্য, অসত্যের পর অসত্যের তথ্য দিয়ে ভরা।
ট্রাম্প সমর্থকদের সশস্ত্র বিক্ষোভ : এ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সের মেরিকোপা কাউন্টির একটি ভোট গণনা কেন্দ্রে সশস্ত্র বিক্ষোভ করেছে ট্রাম্প সমর্থকরা। অস্ত্র হাতে তারা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় একদল সমর্থক ভোট গণনা কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ‘ভোট চুরি বন্ধ করতে হবে’ বলে স্লোগান দেয়। কেন্দ্রের বাইরে রিপাবলিকান সমর্থক বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়ার পর ভোট গণনা বন্ধ করবে নাকি করবে না- এমন দ্বিধায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্পের পক্ষে পড়া ভোট ইচ্ছাকৃতভাবে গণনা করা হচ্ছে না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর ট্রাম্পের সমর্থকরা ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয়। এ সময় তাদের অনেকের হাতে আধুনিক অস্ত্র ছিল। এ্যারিজোনায় এখনও ভোট গণনা চলছে এবং বাইডেন প্রায় ২ শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। অবশ্য এখনও কয়েক লাখ ভোট গণনা বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে। এ কারণে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না ফল কার পক্ষে যাবে।
বিক্ষোভ ও সহিংসতার কবলে যুক্তরাষ্ট্র : পূর্ব আশঙ্কাকে সত্যি করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কে ‘প্রতিটি ভোট গুনতে হবে’ দাবি নিয়ে একটি নির্বাচনী শোভাযাত্রা থেকে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে শিকাগো আর ফিলাডেলফিয়াতেও। এ্যারিজোনায় গণনা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ক্ষমতাসীন ট্রাম্পের সমর্থকরা। অনেক বিক্ষোভকারী ভোটকেন্দ্রে ঢুকে পড়ার পর তাদের আবার বাইরে বের করে আনা হয়। কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ডাকলেও গণনাকারীরা তাদের গণনা বন্ধ করেনি। ফিনিক্স শহরটিও এই কাউন্টির অংশ। ঐতিহ্যগতভাবে এটি রিপাবলিকান হলেও সম্প্রতি এটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। পোর্টল্যান্ড, ওরেগনে প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পোর্টল্যান্ডে বিক্ষোভ থেকে কিছু মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে সিটি সেন্টারে কিছু দোকানের জানালা ভাংচুর করেছে। একে দাঙ্গা বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ। মিনিয়াপোলিসে দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী রাস্তা দখল করলে সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। ডেট্রয়েটে, ট্রাম্প সমর্থকরা ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। সে সময় তারা জানালা ভাংচুর করে। এ্যারিজোনার ফিনিক্সেও একই ধরনের ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়েছে।