পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হরেকরকম ফলের সম্ভার দেশীয় ঐতিহ্যের এক অভাবনীয় দীপ্তি। আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু ও আনারসসহ আরও অনেক উপাদেয় ফল সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। প্রকৃতির অবারিত দানে সমৃদ্ধ শ্যামল বাংলার গাছ-গাছালির অকৃত্রিম ছায়ায় পরিপুষ্ট মানুষ প্রাকৃতিক ফলকেও তাদের জীবন ধারণের উপায় হিসেবে বিবেচনায় রাখে সবসময়। মৌসুমি ফলের পরিপূর্ণ সম্পদ যেমন বাংলার চিরায়ত বৈভব, পাশাপাশি বছরব্যাপী কিছু ফলের সম্ভাবরও দেশটিকে এক অপার সম্ভাবনার দ্বারে পৌঁছে দিয়েছে। ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে প্রকৃতির অভাবনীয় যোগসাজশে ফলের উৎপাদনও বাংলার চিরস্থায়ী ঐতিহ্য। কলা আমরা সারা বছর উৎপাদন করি এবং তা সব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সীমানায়ও থাকে। বৈশাখ মাসের পাকা আমের সৌরভে বাংলার চিরস্নাত প্রকৃতি যে রূপ রসে তার সন্তানদের মুগ্ধ করে রাখে তার বিকল্প ভাবাই যায় না। হরেক প্রজাতি আমের স্বাদের তারতম্যের যে মোহনীয় আমেজ তাও বাংলার উর্বর পলিমাটির অবিস্মরণীয় দান। জাম, কাঁঠাল-আনারস ও তরমুজ গ্রীষ্মকালীন অভাবনীয় ফলাহার যা শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। আম-কাঁঠালের প্রাচুর্য সেই পুরাকাল থেকেই। জাতীয় ফলের মর্যাদা পেয়েছে কাঁঠাল। এসব ফল উৎপাদন প্রকৃতির পরম মমতাঘন নিবিড় ছায়ায় উর্বর মাটির সোঁদা গন্ধের এক অসামান্য অর্জন।
আবার এমন কিছু ফল আছে যা আমাদের দেশে উৎপাদনে ঘাটতিও পরিলক্ষিত হয়। যেমন, মালটা, কমলা ও ড্রাগন- যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে রোগ প্রতিরোধ শক্তি জোগায়। বর্তমানে আমাদের দেশে কমলা, মালটা ও ড্রাগন চাষের প্রতি চাষীর আগ্রহ এক অভাবনীয় সংযোগ। যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকেও জোরদার করেছে। রমজান মাসে এখনও বিদেশ থেকে ফল আমদানি করতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। সে সব ফলের ঘাটতিও পূরণ করা অত্যন্ত জরুরী। দেশের মাটিতে চাষ করে এই সঙ্কট দূর করতে পারলে ফলের স্বয়ংসম্ভরতা তো আসবেই, তার চেয়েও বেশি দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হওয়ার সুফলও পেয়ে যাওয়া কোন ব্যাপারই নয়। সুস্বাস্থ্য এবং নিরাপদ জীবনের অকৃত্রিম চাহিদায় ফলের সম্ভারকে আরও সম্প্রসারিত করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সময়ের দাবি।