কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামাতের প্রথমপর্বের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা। বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যেই এক বর্গকিলোমিটারের ইজতেমার বিশাল ময়দান মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। প্রথমপর্বে ৬৪ জেলার তাবলীগ অনুসারী মুুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। প্রথমপর্বের বিশ^ ইজতেমার নেতৃত্বে রয়েছেন আলেমি অনুসারী যোবায়ের গ্রুপের দল। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকবেন সা’দপন্থী ওয়াসিকুল ইসলাম ও শাহাবউদ্দিন অনুসারীর দল। তিনদিনের এই বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত হবে রবিবার। চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে দ্বিতীয়পর্বের ইজতেমা, চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। সেখানেও রয়েছে আখেরি মোনাজাতের আনুষ্ঠানিকতা। প্রায় ১০০ দেশের তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নেবেন বলে আয়োজকরা জানান। ইতোমধ্যে ৩০ দেশের মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বার্ধক্যজনিত কারণে ইজতেমায় আসা এক মুুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। দু’পর্বের বিশ^ ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার টঙ্গী বিশ^ ইজতেমা ময়দানের ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি ও গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন এবং ইজতেমা আয়োজনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তারা বলেন, বিশ^ ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা আসা-যাওয়া এবং অবস্থানকালীন যাতে কোন সমস্যায় না পড়েন তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪৫টি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। চিকিৎসা সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হামদর্দ ল্যাবরেটরি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যাল, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, গাজীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, মানবাধিকার কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতর, র্যাব ফোর্স। হামদর্দ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান কাজী গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে ধর্ম সচিব নুরুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, হামদর্দের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
র্যাবের কার্যক্রম : বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, তিন দিনব্যাপী বিশ^ ইজতেমার নিরাপত্তা দিতে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যদের নিয়ে পুরো এজতেমা ময়দানকে ঘিরে ফেলা হয়েছে। স্থল, আকাশ ও নৌপথে র্যাবের টহল ব্যবস্থা থাকবে সার্বক্ষণিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো রুখে দেয়ার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
যেসব শূরা সদস্য ময়দানে উপস্থিত : ইজতেমা ময়দানে ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকজন শূরা সদস্য উপস্থিত রয়েছেন। তারা হলেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা, মাওলানা ফারুক ওরফে ভাই ফারুক, মাওলানা জুহায়েরুল হাসান, মাওলানা ইসমাইল গোদরা ও পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক, মাওলানা খুরশিদ আলম, মাওলানা ডাঃ নওশাদ, মাওলানা ফাহিম, মাওলানা হাসমত উল্লাহ, মাওলানা বখতে মুনির ও মাওলানা শাহেদ।
সিসি ক্যামেরার আওতায় ইজতেমা ময়দান : বৃহস্পতিবার থেকে ইজতেমার চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় আট হাজার বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইজতেমার শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকবে। এবারও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ মাঠের আশপাশসহ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ইজতেমাস্থলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অলিম্পিয়া টেক্সটাইল মিলস্ প্রাঙ্গণে পুলিশের এক ব্রিফিংয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিট পুলিশ কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, টঙ্গী ব্রিজ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মন্নু গেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদসহ পুরো এলাকাকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নজরদারির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
এদিকে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় পাঁচ-স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। যাতে কোন কুচক্রীমহল ইজতেমা ময়দানে কোন ধরনের জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে কোন জঙ্গী কার্যক্রম প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান।