কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের নির্মম হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করে বলেছেন, শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক সেটাই আমরা চাই। বুলেটের আঘাতে একটি ফুল (শেখ রাসেল) কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায় আর তা ফুটতে পারেনি। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেজন্য তার সরকার শিশুদের জন্য একটি ভবিষ্যত রচনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রবিবার জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা দেয়া স্বাধীনতার সুফল দেশের জনগণের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক ঘরে পৌঁছাবে এবং প্রতিটি শিশু লেখাপড়া শিখে আগামীদিনে এদেশের কর্ণধার হবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে- সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিশুরা যেন ঘরে বসে পড়া চালিয়ে যায় এবং তারা যে কাজে পারদর্শী, সেই কাজে ব্যস্ত রাখা হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে সবাইকে পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে রাসেলের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাসেলের জন্ম। কিন্তু তার জীবন শেষ হয়ে যায়। একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে চিরবিদায় নিতে হয়। সে ফুল আর ফুটতে পারেনি।’ এ সময় কবি সুকান্তের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রথমে ছোটভাইয়ের বিদ্যাপিঠ ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ রাসেলের ‘ম্যুরাল’ উন্মোচন করেন এবং ‘শহীদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন করেন। শহীদ শেখ রাসেলের স্মৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল এ্যান্ড কলেজের যৌথ সার্বিক সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ম্যুরালটি।
ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শহীদ শেখ রাসেলের ওপর নির্মিত এনিমেটেড ডকুমেন্টারি ‘বুবুর দেশ’-এর প্রদর্শনী এবং শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর প্রকাশিত বই ‘শেখ রাসেল আমাদের আবেগ’ এবং ‘স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। এ সময় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ প্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আকতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান একেএম রহমতুল্লাহ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ইউনিভার্সিটি ল্যাবেরেটরী স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিনা বানু বক্তব্য রাখেন। পরে উপস্থিত অতিথিরা শেখ রাসেলের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর সংসদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে প্রচারিত শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রম সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র অবলোকন, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটির সঙ্গে একাধারে প্রধানমন্ত্রীর গণভবন, শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংযুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রান্তে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদান করেন। শেখ রাসেল অনলাইন দাবা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার এবং সংগঠনটির সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তিনি ল্যাপটপও বিতরণ করেন।
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ রকিবুর রহমান, মাহমুদ উস সামাদ এমপি, তরফদার মোঃ রুহুল আমিন, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সভাপতি কে এম শহীদুল্লাহসহ সংগঠনটির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদকে ১০০টি ল্যাপটপ এবং মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল ১ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তির অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ১৫শ’ টাকা করে মোট এক কোটি ৮০ লাখ টাকা অনুদান দেন সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার তরফদার মোঃ রুহুল আমিন।
অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিশুরা যেন ঘরে বসে পড়া চালিয়ে যায় এবং তারা যে কাজে পারদর্শী, সেই কাজে ব্যস্ত রাখা হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে সবাইকে পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিশুরা দেশপ্রেমিক হবে, মানুষের মত মানুষ হবে, মানুষের সেবা করবে এবং নিজেদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে, আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আমি জানি করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ।
তিনি বলেন, এটা সত্যিই যে কোন শিশুর জন্য খুব কষ্টকর। কিন্তু হয়ত এই রকম অস্বাভাবিক অবস্থা থাকবে না। তবুও আমি তাদের বলব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে। যাই হোক, ঘরে বসে পড়াশোনা করা এবং সেই সঙ্গে যারা আর্ট করতে পারে, খেলাধুলা করতে পারে- যে যতটুকু পারে সেইটুকু তাদের করতে হবে এবং সেভাবে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে হবে। যখন ¯ু‹ল খুলবে তখন যেন তারা আবার ভালভাবে স্কুলে যেতে পারে, পড়াশুনা করতে পারে- সেদিকে বিশেষভাবে সবাইকে নজর রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেলের বিদ্যাপিঠের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে তার (শেখ রাসেল) স্কুলের সব শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা যে উদ্যোগটা নিয়েছেন, সেখানে রাসেল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই স্কুলের ছাত্রছাত্রী যুগ যুগ ধরে যারা পড়াশোনা করবে তারা এটুকু শিখবে, এইটুকু জানবে যে, একটি ছোট্ট শিশু (শেখ রাসেল) ছিল এই স্কুলে, যে শিশুটিকে বাঁচতে দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শিশুদের জন্য বলবÑ আমাদের শিশুরা দেশপ্রেমিক হবে, মানুষের মত মানুষ হবে, মানুষের সেবা করবে এবং নিজেদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে।
তিনি এ সময় করোনাভাইরাসকালীন সতর্কতা হিসেবে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করা এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে স্কুল খুললেই সকলে আবার শ্রেণী কার্যক্রমে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে তিনি অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি তাদের মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ এবং খেলাধুলার সুযোগ করে দেয়ারও আহ্বান জানান।
শেখ রাসেলের জন্মের সময়কার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল যেদিন জন্ম নিয়েছে, সে দিনের কথাটা এখনও আমার মনে পড়ে। একটা ছোট্ট শিশু আসবে, আমাদের পরিবারে, আমি কামাল-জামাল, রেহানা- আমরা সবাই খুব উৎসাহিত এবং বেশ উত্তেজিত ছিলাম, কখন সেই শিশুটির কান্না আমরা শুনব, কখন তার আওয়াজটা পাব, কখন তাকে কোলে তুলে নেব। আর সেই ক্ষণটা যখন এলো, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সময় ছিল। ছোট্ট শিশুটি আমাদের সবার চোখের মণি ছিল।
শৈশবে বাবাকে কাছে না পাওয়ায় ছোট্ট শিশু রাসেলের বেদনার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কি দুর্ভাগ্য তার, ৬৪ সালের অক্টোবরের ১৮ তারিখ তার জন্ম। এরপর ৬৬ সালে আবার বাবা (বঙ্গবন্ধু) যখন ৬ দফা দাবি দিলেন- তিনি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ৬৬ সালের মে মাসে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বন্দী হয়ে গেলেন। ছোট্ট রাসেল কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা কারাগারে। যখন সে একটু বড় হলো, তখন কারাগার থেকে বাবাকে কীভাবে নিয়ে আসবে, সে জন্য ‘বাড়ি চল, বাড়ি চল’ বলে কান্নাকাটি করত। ’৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন আমার বাবা মুক্তি পান, তখন যে জিনিসটা সব সময় দেখতাম, রাসেল সর্বক্ষণ- মনে হয় যেন ওর ভেতরে একটা ভয় ছিল যে কোন মুহূর্তে বুঝি বাবাকে হারাবে, তাই বাবা যেখানেই যেতেন, যে কাজই করতেন, খেলার ছলে কিছুক্ষণ পর পরই একবার করে সে দেখে আসত যে বাবা ঠিক আছেন তো। বাবা মিটিংয়ে থাক বা যেখানেই থাক, সে ছুটে ছুটে যেত।
আবেগজড়িত কণ্ঠে শেখ রাসেলের নীরব কান্নার কথা তুলে ধরে তার বড় বোন শেখ হাসিনা আরও বলেন, একাত্তর সাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে। ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁকে গ্রেফতার করা হলো। তারপর থেকে তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, আমরা জানি না। বেঁচে আছেন কিনা সেটা জানাও আমাদের সম্ভব ছিল না। ১৯৭১ সালে শুধু জাতির পিতাকে বন্দী করা হয়নি, আমার মাকেও বন্দী করা হলো। রাসেলও তখন বন্দী। আমার ভাই কামাল মুক্তিযুদ্ধে চলে যাচ্ছে, এক সময় জামালও গেরিলা কায়দায় বন্দীখানা থেকে চলে গেল মুক্তিযুদ্ধে। রাসেলের চোখে সব সময় পানি। ওইটুকু একটা ছোট্ট শিশু, সে তার কষ্টটা কাউকে বুঝতে দিত না। যদি জিজ্ঞেস করতাম, কি হয়েছে? বলত, চোখে কিছু একটা পড়ে গেছে। তার যে নীরব কান্না তা সে কখনও প্রকাশ করত না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও ছোট থাকতেও রাসেল- আব্বা যখন জেলে, মাঝে মধ্যে সে কান্নাকাটি করত, কিন্তু আমরা বুঝতাম না। হঠাৎ মধ্যরাতে, বিশেষ করে যেদিন আমরা কারাগারে দেখা করতে যেতাম, ওইদিনটা তার জন্য খুব কষ্টের ছিল। সে রাতে সে ঘুমাত না, কান্নাকাটি করত। আমাদের সবাইকে ডাকত- আমি কামাল, জামাল, রেহানা- আমরা সবাই তার পাশে বসতাম। গভীর রাত, ১২টা, ১টা, ২টায়। অতটুকু বাচ্চা, সে তো আর বলতে পারত না। কিন্তু তার কষ্টটা আমরা উপলব্ধি করতাম। এভাবে সে বড় হয়েছে। স্বাধীনতার পর সে মাত্র সাড়ে তিন বছর বাবাকে কাছে পেয়েছে। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সব শেষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলবে। করোনাভাইরাসের মাঝেও ঘরে বসে পড়ালেখা চালিয়ে যাবে। দেশের সেবায় নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলবে। এটাই তোমাদের কাছে আমাদের চাওয়া। শেখ রাসেলের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর রাসেল সব সময় বাবার সামনে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াত। রাসেল সব সময় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হওয়ার স্বপ্ন মনে লালন করত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাতে দেশের শিশুরা সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, এটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। দেশব্যাপী এ সংগঠন কাজ করে চলেছে। প্রতিবছর এ সংগঠন আজকের দিনে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে। এতে করে শিশুদের মাঝে সুপ্তপ্রতিভা বিকশিত হয়।
তিনি আরও বলেন, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন হয়েছে বলেই আমি এ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে পেরেছি। অনুষ্ঠানগুলোতে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবার সামনে কথা বলতে পারছি।
তিনি বলেন, আসলে করোনা পরিস্থিতির কারণেই আমার বাইরে যেতে বাধা রয়েছে। ফলে গণভবনে থেকেই আমাকে রাষ্ট্রীয় সব কাজ করতে হচ্ছে। আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে আমি এবার সরাসরি ছোট্ট সোনামণিদের আজকের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারলাম না। এটা আমার জন্য দুঃখের। তবে ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও সবার সঙ্গে দেখা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী।
মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকসমাগম হয় এমন স্থানে কেউ মাস্ক ছাড়া যাবেন না। সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এই করোনাভাইরাস থেকে আল্লাহ যেন সবাইকে রক্ষা করেন এবং সবাই যেন সুরক্ষা মেনে চলেন সেটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, বেশি লোক থাকলে আমি নিজেও সেখানে সবসময় মাস্ক পরে থাকি এবং সবাইকে আমি বলব যেখানেই বেশি লোক সমাগম সেখানে সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবাইকে মেনে চলতে হবে, শরীরের প্রতি সকলেই যত্ন নেবে।’
প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ছাত্রছাত্রীরা সকলেই পড়াশোনায় মনযোগী হবে। আমার একটাই লক্ষ্য- বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এদেশের জন্য ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছে, দুই লাখ মা-বোন যে সম্ভ্রম দিয়েছেন, সে কথা সবসময় আমাদের মনে রাখতে হবে। আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, রোলার স্কেটিং ফেডারেশনকে তাদের চমৎকার ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য। এসবের মধ্যদিয়ে মানুষ রাসেলকে জানতে পারবে, শিশুরা জানতে পারবে। তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য যে প্রকাশনা করা হয়েছে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা, দেশপ্রেমিক করা, দেশের সেবা করার মনোভাব যাতে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে, তারা যেন সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, সেদিকে চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি করা হয়েছিল। আজকে বাংলাদেশব্যাপী এই সংগঠন, যে সংগঠনের অনেক ছেলেমেয়েই আজকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে, অনেকে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, অনেকে রাজনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে।
‘রাসেল’ নামকরণটি তাঁর মা’ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার করা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, ‘আব্বা (জাতির পিতা) বারট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে, নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখলেন। রাসেলের স্বপ্ন ছিল সে সেনাবাহিনীর অফিসার হবে। গ্রামে গেলে বাচ্চাদের সে প্যারেড করাত। রাসেলের ইচ্ছায় শিশুদের কাপড় দিতে হতো। ওর মনটা ছিল খুব উদার।’ শেষাংশে কবি সুকান্তের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’