কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার ভয় কাটিয়ে দেশের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি এখন পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনের দিকে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগ এখন সেই নির্বাচন ঘিরেই। ইতোমধ্যেই উপনির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর মধ্যে সরগরম ভাব চলে এসেছে। এছাড়া পৌর নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সব দলের তৃণমূলের রাজনীতিতেও চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। বিশেষ করে দলের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন। দলীয় সক্রিয় কর্মী প্রমাণ করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
ইতোমধ্যে তিনটি আসনের উপনির্বাচন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বিশেষ করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন। এই আসনের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে দু’দলের কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই দুটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের প্রার্থীদের মনোনয়নও নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আসন দুটিতে।
বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে আগামীতে আর কোন নির্বাচন তারা বয়কট করবে না। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দলটির মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বেশি অনীহা ছিল। করোনাকালে এসে তাদের সেই ভাব কেটে গেছে। এখন তারা সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর দলের এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন উপনির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনসহ আগামীতে সব নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তিনি বলেন, বরাবরই তাদের সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার। উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেবে বিএনপির সেই সিদ্ধান্ত আছে। কোভিড-১৯ এর কারণে দুটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তীকালে প্রচারে যাইনি, সরে দাঁড়িয়েছি।
ইসি সচিব মোঃ আলমগীর এর আগে জানান, করোনার কারণে আর কোন নির্বাচন স্থগিত করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব উপনির্বাচন এবং সাধারণ নির্বাচন সময়মতো অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইসি সচিবের এই ঘোষণা অনুযায়ী ইতোমধ্যে করোনায় আটকে থাকা উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। মৃত্যু ও বরখাস্ত জনিত কারণে আটকে থাকা এবং স্থগিত থাকা অনেক স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে আটকে থাকা দেশের ১১ উপজেলা ও ২৪৪ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর এসব স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১১ উপজেলার মধ্যে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সাধারণ ও বাকি ১০টিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে ২৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ১০টিতে সাধারণ ও বাকি ২৩৪টিতে বিভিন্ন পদে উপনির্বাচন হবে। একই দিন ১৫ জেলা পরিষদের ১৬ ওয়ার্ডে উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। আইন অনুযায়ী এসব স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। ফলে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাই শুরু হয়েছে। এসব নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলের তৃণমূলে রাজনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়ে গেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সারাদেশে আড়াই শ’ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে পৌরসভাগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণের সময়, সীমানা সংক্রান্ত ও মামলা জটিলতায় নির্বাচন স্থগিতসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের পরই তফসিল ঘোষণার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হবে। পৌরসভা নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া দলের মনোনয়ন পেতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা লবিং-গ্রুপিং শুরু করেছেন। এলাকায় নিজের প্রার্থিতার সমর্থনে অনেকেই পোস্টার সাঁটিয়েছেন। অনেকে আবার আগেই ভোট প্রার্থনা করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
পৌরসভার পাশাপাশি আগামী বছরের এপ্রিল থেকেই সারাদেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরেও প্রার্থীরা বেশ তৎপরতা শুরু করেছেন আগ থেকেই। আইন অনুযায়ী স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে দলীয় ভিত্তিতে। বিশেষ করে উপজেলায় চেয়ারম্যান এবং ভাইসচেয়ারম্যান, পৌরসভায় মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হতে হলে আগে দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হবে। কেবল দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে ইসির পক্ষ থেকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়া কেউ ইচ্ছে করলে স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচন করতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় প্রতীক পাবে না।
তৃণমূলের এসব নির্বাচন ঘিরেই এখন রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। করোনাকালেও এখন দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক। নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই। এসব নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের ত্যাগীদের কার্যক্রম পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলের জনপ্রিয়, ত্যাগী এবং দায়িত্ব পালনে সক্ষম এমন নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তারা জানান, যারা দলের জন্য নিবেদিত এবং যে কোন বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ান এমন জনপ্রিয় নেতাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে।
এদিকে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা, অনেকটা স্থবির থাকা বিএনপিও গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে। আগামীতে সব নির্বাচনে অংশ নিতেই তারাও প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলের মহাসচিব নির্বাচনে অংশ নেয়াকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দলটির সূত্রে জানা গেছে আগামী পৌরসভাসহ সব নির্বাচনেই তারা একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে এখন থেকেই কাজ করছে। গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে উপজেলা নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এরপর সিটি কর্র্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও নির্বাচনী ধারায় ফেরার চেষ্টায় রয়েছে তারা। এখন থেকে সব স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার পর বিএনপির তৃণমূলেও এখন চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। করোনাভাইরাস উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন তারা।
শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, ইসিতে নিবন্ধন রয়েছে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলে সঙ্গে যারা জোটবদ্ধ রয়েছে তারাও এই নির্বাচন নিয়ে হিসাব নিকাশ করছেন। নির্বাচনের কারণে রাজনৈতিকদলগুলো এখন নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করেছে। একই সঙ্গে তৃণমূলেও রাজনীতি এখন গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে।