গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
গোয়াইনঘাটে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ২ মাসে ৪ দফা সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার কৃষি ব্যবস্থাকে দুমড়েমুচড়ে ক্ষতবিক্ষত করে গেছে। সর্বনাশা বানের জলে নিমজ্জিত কৃষকের রোপায়িত ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধান করে যায়।
পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট সর্বগ্রাসী এ বন্যায় ভেসে গেছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় সব কৃষকের স্বপ্নও। বন্যার কারণে গোয়াইনঘাটের আউশের রোপায়িত ফসলের ব্যাপক ক্ষতিই এবারের আউশ উৎপাদনের লক্ষমাত্রার পথকেও ব্যাহত করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাটে এবার আউশ ৭ হাজার ১ শত ২৯ হেক্টর ধান রোপণ করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১২ শত হেক্টরই বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার ফতেহপুর, নন্দিরগাঁও ও আলীরগাঁওয়ের কৃষকরাই বেশি আউশ ধান ফলিয়েছিলেন। ফতেহপুরের কৃষকরা উচু এলাকায় জমির অবস্থান হওয়ায় কোন রকম বন্যার পানির তোড় থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ১২শ হেক্টর আউশের ক্ষতি হলেও অবশিষ্ট জমির ফসল রক্ষা সম্ভব হয়েছে।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আউশের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠে প্রান্তিক কৃষকরা জড়ি, লাইনজড়, বাধাইল, বিরইনসহ অন্যান্য দেশী জাতের ধানের বীজ বাইন (ছিটিয়ে) দিচ্ছে। বন্যায় আমনের ১৫ হেক্টরের মতো বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বন্যায় আউশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিস নতুন করে ১৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে রোপা ও বোনা আমন রোপণের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করেছে। উপজেলার কৃষকদের বন্যাক্রান্ত জমিতে উন্নত জাতের রোপামন রোপণে কৃষকদেরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সরকারি বরাদ্দে আপদকালীন সময়ে কৃষকের প্রয়োজনার্থে ২০ মিটার দূরত্বে ১ বিঘা ভাসমান বীজতলা করে কৃষকদের বীজ সহায়তা দিয়ে পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাটের উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সুলতান আলী জানান, গোয়াইনঘাটের এবারের বন্যায় সর্বসাকুল্যে গোয়াইনঘাটের ৩ হাজার ৯শ হেক্টর আউশ, বোনা আমন, সবজিতলা ও ৩০ হেক্টর বীজতলা সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হয়েছিল। বন্যা সৃষ্ট দুর্যোগে আউশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং উপজেলার বিভিন্নস্থানে নতুন করে ১৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে রোপামন চাষাবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার কৃষকদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জমিতে নতুন করে উন্নত জাতের রোপামন ধান রোপণে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদি ধান রোপণ সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে মাশকলাই বা সবজি আবাদ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তরফে সরকারি বরাদ্দে আপদকালীন বীজতলা ও ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যে কোন পরামর্শ ও সহযোগিতায় উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের দোরগোড়ায় রয়েছি।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব বলেন, গোয়াইনঘাটে দফায় দফায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে কৃষি, মৎস্য ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে। বিশেষ করে কৃষকদের আউশ ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। আউশের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের সব ধরণের সরকারি সহযোগিতা দানে একাধিক উদ্যোগ আছে। বন্যায় ফসলের মাঠের এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হয়েছে। সর্বোপরি কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকের কল্যাণার্থে সবসময় পাশে থাকবে।