কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের (টিবিএল) কার্যক্রম আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সারাদেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করাসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেক সভায়। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ২ হাজার ১০৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩১৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন। সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীসসহ অন্যরা।
পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন জানান, গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবাপ্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সেটি আবার ফেরত দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, টেলিটকের দায়িত্ব বাড়াতে হবে। প্রকল্পটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে তারপর একনেকে উপস্থাপন করতে হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ বাস্তবায়নে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে ‘৫জি’ নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প চেয়েছিল টেলিটক। বর্তমানে শহরাঞ্চলে বিদ্যমান টেলিটকের ‘ফোরজি’ নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত করে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুসারে, ২০২১-২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ফাইভজি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নিশ্চিত করা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যেন আধুনিক প্রযুক্তি সেবার উপকারভোগী হয়, তা নিশ্চিত করতে নিরলস কাজ করছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। দেশের প্রায় ১০ কোটি জনগণ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ হার গ্রামে বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে ব্যবহারকারর ক্রয়ক্ষমতা অনেকাংশে কম, ব্যক্তি মালিকানাধীন অন্য মোবাইল অপারেটররা এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবসায়িক ও মুনাফা বিবেচনায় নেটওয়ার্ক বিস্তারের মাধ্যমে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে চায় না। ফলে গ্রামের মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একনেক সভায় গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন প্রকল্পটি উপস্থাপন শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা যাচাইয়ের জন্য ফেরত দেয়া হয়।
প্র্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সচিব জানান, নদী ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে ভালভাবে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সভায় দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যা ও জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ২৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের হাসপাতালগুলোতে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হলে একদিকে ঢাকায় চিকিৎসার চাপ কমে যাবে, অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের কিডনি রোগ চিকিৎসায় বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে। সচিব মোঃ নূরুল আমিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে কিডনি রোগের চিকিৎসা হলেও রোগীর সংখ্যায় তা খুবই অপ্রতুল। অথচ কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের কিডনি রোগীকে জেলা শহরেই উন্নত চিকিৎসা দিতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ২০ ভাগ রোগীর কিডনি ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছে। কিডনি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৪০ হাজার রোগীর বর্তমানে সাপ্তাহিক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। এর মধ্যে সরকারী-বেসরকারী মিলে মাত্র ছয় হাজার মানুষের ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছে। সভায় জানানো হয়, গৃহীত প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের মেডিক্যাল কলেজ পর্যায়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ২২ ডায়ালাইসিস ইউনিটে ১১০০ বেডের মাধ্যমে এবং জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ৪৪টি ডায়ালাইসিস ইউনিটের মাধ্যমে ৪৪০ বেডের সর্বমোট ১৫৪০ বেডের ডায়ালাইসিস সেবা সরকারী পর্যায়ে সারাদেশে সম্প্রসারিত হবে। এই প্রকল্পের ১৫৪০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিটের মাধ্যমে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৩ হাজার ১২০ বার ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রতি বেডে দৈনিক তিন থেকে চার বার ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বানেশ্বর-সারদা-চারঘাট-বাঘা-লালপুর-ঈশ্বরদী জেলা মহাসড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কমানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের সামনে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তেজগাঁওএ বিসিকের বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বিসিকের ৮টি শিল্পনগরী মেরামত ও পুননির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীবর্গ সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।