স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকায় এক ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীকে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে দু’সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছে স্ত্রী। গত বুধবার মধ্যরাতে মোমিনখলাস্থ গফ্ফার মিয়ার ভাড়াটে বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ সময় পুলিশ লাশের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো দা জব্দ করেছে।
নিহত ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীর নাম নিজাম উদ্দিন (৪০)। তিনি নগরীর ছড়ারপার থেকে মোগলাবাজার থানার দাউদপুর এলাকার আব্দুল মন্নানের পুত্র। বর্তমানে তিনি সিসিক এর ২৫ ওয়ার্ড মোমিনখলা গফ্ফার মিয়ার ভাড়াটে বাসার বাসিন্দা। পুলিশ এ ঘটনার পর থেকে ঘাতক স্ত্রীকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে মোমিনখলাস্থ গফ্ফার মিয়ার ভাড়াটে বাসায় স্ত্রী-দু’সন্তানকে নিয়ে নিজাম উদ্দিন বসবাস করে আসছিলেন। প্রায় সময় তাদের পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। ঘটনারদিন রাতে আশপাশের লোকজন কোন সাড়া শব্দ পায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাদের ঘরের দরজায় তালা দেয়া দেখে ১০ টার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে থানার এসআই রিটন চন্দ্র দত্তসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে দরজার তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় ঘর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিজাম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া লাশের শরীরে পুরুষাঙ্গ কর্তন, ঘাড়ে দা’র কোপ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশের পাশ থেকে এ সময় রক্তমাখা ধারালো একটি দা উদ্ধার করে জব্দ করেছে পুলিশ।
পুলিশের ধারণা, ঘুমের কোন কিছু খাইয়ে নিজাম উদ্দিনকে অচেতন করে গভীর রাতে ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে দু’সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যায়। গতকাল ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, নিজাম উদ্দিন ২ সন্তানসহ স্ত্রী নিয়ে মোমিনখলার ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছেন। গত বুধবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় নিজামকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করা হয়। লাশের মাথায় গভীর ক্ষত, হাতে আঘাতের চিহ্ন ও গোপনাঙ্গ দ্বিখন্ডিত করা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরকীয়ার জেরে এ খুন হতে পারে। ঘটনার পর স্ত্রী ২ সন্তান নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় বুঝা যাচ্ছে খুন সে করতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। নিজামের শশুরবাড়ী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়।
বাসার মালিক গফ্ফার মিয়া বলেন, নিজাম উদ্দিন স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে সে আমার বাসায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। পুলিশকে জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে।
এদিকে, ঢাকা-সিলেট বাইপাস সড়কের মুছারগাঁও এর লোকমান মিয়ার মার্কেটের পরিবহন ট্রান্সপোর্টের মালিক নিজাম খুনের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা তীব্র নিন্দা জানান। দক্ষিণ সুরমা মালামাল পরিবহন কল্যাণ সংস্থার সদস্য নিজাম খুনের ঘটনায় সংস্থার উদ্যোগে খুনিকে দ্রুত গ্রেফতার করতে তারা মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস শহীদ ও প্রচার সম্পাদক মশাহিদ আহমদ।
নিহতের ভাই আসলাম আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ৬ লাখ টাকার জন্য তার ভাই নিজাম উদ্দিনকে খুন করেছেন জেনি বেগম। আসলাম আহমদ বলেন, আমরা দুই ভাই জায়গা কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা জমা করেছিলাম। কিন্তু পছন্দমতো জায়গা পাচ্ছিলাম না। জেনি বেগম ওই টাকা তার বাবার বাড়িতে দরকারের কথা বলে নেন। জমি পাওয়া গেলে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। এখন আমরা জমি পাওয়ায় ভাই নিজাম উদ্দিন টাকার কথা বলেন জেনিকে। কিন্তু তিনি বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিচ্ছিলেন না। টাকা চাওয়াতেই এ খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি দ্রুত জেনি বেগমকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, মোমিনখলাস্থ গফ্ফার মিয়ার ভাড়াটে বাসায় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনকে হত্যা করে স্ত্রী তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। গতকাল তালা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি স্ত্রী ছাড়া আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) জ্যোতির্ময় সরকার পিপিএম জানান, পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। খুনিকে গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে। আসামী আটক হলে খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।