দেশে ৫০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার ঝুঁকিতে

57

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইন্টারপোলের সতর্কতা অনুযায়ী সাইবার হামলার রেড জোনে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় হ্যাকাররা বসে নেই বরং তারা আরও বেশি সক্রিয়। কারণ এখন প্রায় সবাই জেনে না জেনে টেকনোলজিগুলো ব্যবহার করছে। সম্প্রতি ইন্টারপোল থেকেও বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে সাইবার হামলার রেড জোনে। সাইবার অপরাধ তদন্তে সংশ্লিষ্ট অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যাংকিং সফটওয়্যার নিয়ে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে ব্যাংকের দৈনন্দিন কারিগরি ও গ্রাহক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ঘটনা জানাজানির পর তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শোকজও করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে গচ্ছিত থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক হ্যাকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার হামলারও তিন বছর আগে সাইবার হামলার বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিন্তু এরও আগে দেশে প্রথম ইসলামী ব্যাংক সাইবার হামলার শিকারে পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার ঝুঁকির মধ্যে আছে। একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় বিদেশীকে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কমপারিটেকের’ প্রকাশিত গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নিচের সারিতে। সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে সবচাইতে ঝুঁকিতে থাকা দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের মোট ৬০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে অনিরাপদ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশের স্মার্টফোনই ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত। এছাড়া কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যার আক্রান্তের হার ১৯ দশমিক ১ শতাংশ।
কমপারিটেকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ আলজেরিয়া। তালিকায় এরপর যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তানজানিয়া এবং উজবেকিস্তানের স্থান। নিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশের পরই রয়েছে পাকিস্তান। ঝুঁকির বিচারে তালিকায় চীন ১৩ নম্বরে এবং ভারত ১৫ নম্বরে রয়েছে। বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক খাত সাইবার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেই। শুধু বাংলাদেশই নয়, সাইবার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। শুধু গত পাঁচ বছরেই সাইবার হামলার সংখ্যা বেড়েছে ২০০ গুণ। বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট হওয়ার পরও যথাযথ সতর্কতার অভাবে ছোটখাটো পরিসরে হলেও আবারও বিপর্যয় ঘটাবার সুযোগ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে রাজধানীর বাড্ডায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে ৩ লাখ টাকা সরিয়ে নেয় জালিয়াত চক্র। কিন্তু ব্যাংকের মূল সার্ভারে ওই লেনদেনের কোন রেকর্ড ছিল না। আবার কোন গ্রাহকের হিসাব থেকেও টাকা খোয়া যায়নি। ওই ঘটনার পরদিন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আরেকটি বুথ থেকে একই কায়দায় টাকা তুলতে যায় জালিয়াত চক্রের আরেক সদস্য। ওই সময় সঙ্গে সঙ্গে এক বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পান্থপথের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও পাঁচ বিদেশিকে। এর আগে গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড বানিয়ে বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটলেও; মূল সার্ভারকে অন্ধকারে রেখে বুথ থেকে টাকা বের করার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। এ ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৫০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। সম্প্রতি প্রকাশ করা সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত দেশের ৫০ শতাংশ ব্যাংক তাদের সাইবার নিরাপত্তায় নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়াল (এনজিএফডাবিউ) সফটওয়্যার স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটি স্থাপন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে আংশিক এবং অনুমোদন পর্যায়ে থাকা এ ৫০ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে এবং যে কোন সময় এগুলো সাইবার হামলার সম্মুখীন হতে পারে।