স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষে উত্তাল ছিলো ক্যাম্পাস। এদিকে শাবিপ্রবি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আজ ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ করা হয়েছে।
আইসিটি ভবনের সামনে রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এর মধ্যেই সন্ধ্যা ৬টার দিকে আইসিটি ভবনের গেটের তালা ভেঙে পুলিশ ভেতরে গিয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বের করে তার বাসভবনের দিকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত অন্তত পাঁচজনকে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, পুলিশের গুলিতে অধ্যাপক জহির গুলিবিদ্ধ হননি। ওই গুলি কারা ছুড়েছে তা তিনি জানেন না। তাকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক নারী কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন আজবাহার আলী শেখও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবীর জানান, এ ঘটনায় শিক্ষক, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে। তাদের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রক্টর আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অধ্যাপক জহির শঙ্কামুক্ত।
আন্দোলনকারী কয়েকজন জানান, তাদের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরাও অবস্থান থেকে সরে যাননি।
জানা গেছে, আইসিটি ভবনে রবিবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে শ্লোগান দেন বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সহপাঠীরাও। বেলা তিনটার দিকে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক জহির উদ্দিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলশি কুমার দাস। তারা দাবি পূরণের বিষয়ে সময় চাইলে ছাত্রীরা তা প্রত্যাখান করেন। এরপর নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনের দিকে যাচ্ছিলেন উপাচার্য। সে সময় তার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যায় ছাত্রীরা। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ঘেরাও করে শ্লোগান দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে ছাত্রীদের ধাওয়ায় উপাচার্য আইসিটি ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’ বলে শ্লোগান দিতে থাকেন। এ ঘটনার পর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন। উত্তেজনা বাড়তে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
তিন দফা দাবি আদায়ে চতুর্থ দিনের মতো চলে সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীদের এ আন্দোলন। শনিবার মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রবিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেয় তারা। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ দেয়া। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে শুক্রবার দাবি মেনে নেওয়ার জন্য শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ছাত্রীরা। এরপর শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অব্দি চলে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ।
এদিকে,আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। রবিবার রাতে জরুরী সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন সেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন। তার পরিবর্তে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে। তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন করছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম চলবে বলে জানান উপাচার্য।
