চার দিনে স্পেনে করোনায় কোন মৃত্যু নেই, মেক্সিকো হয়ে উঠেছে নতুন মৃত্যুপুরী

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউরোপের দেশ স্পেনে সোমবার থেকে কোন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। আর কোভিড-১৯ এর নতুন মৃত্যুপুরী মেক্সিকোতে একদিনে রেকর্ড ১০৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে ১৬ ফুটবলার করোনায় আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি। আক্রান্তে এবার চীনকে ছাড়িয়ে গেছে পাকিস্তান। ভারতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড।
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬৬ লাখ সাত হাজার ৭৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিন লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৫ জন হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৭ জন। এ্যাক্টিভ কেস রয়েছে ৩০ লাখ ২৫ হাজার ৮২৫ জন। গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন ৫৪ হাজার ২৪৫ জন। বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম প্রহরে আক্রান্ত হয়েছে ৪৫ হাজার ৮২ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৭৮৮ জন।
করোনায় প্রাদুর্ভাবে এক সময় বিপর্যস্ত স্পেন বুঝি ভাইরাসটি প্রতিরোধে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ যেভাবে কমতে শুরু করেছে তা আশা জাগানিয়া। সোমবার দিনটি ছিল তারই প্রমাণ। তিন মাস পর ওইদিন থেকে করোনায় কোন মৃত্যু দেখেনি স্পেন। দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য জানিয়েছে। আর এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে মহামারী করোনা যখন এশিয়া-আমেরিকায় যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো স্পেনও সুখবর দিল। তবে মৃতের সংখ্যায় ইউরোপে ব্রিটেন আর ইতালির পরপরই স্পেনের অবস্থান। বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রকোপ শুরু হওয়ার পর গত ৩ মার্চ দিনটিও স্পেনের জন্য এমন সুখকর ছিল। ওইদিনের পর প্রথম মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টা পার করার খবর স্পেনের জনস্বাস্থ্য, ভোক্তা অধিকার এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পরিসংখ্যানে নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়টির পক্ষ থেকে দেয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ১২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার থেকে সে সংখ্যা ছিল অপরিবর্তিত। এছাড়া সপ্তাহজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল কম; মাত্র ৩৪ জন। তবে একই সময় করোনা পরীক্ষায় নতুন পিসিআর মেশিনের সংখ্যা বাড়ায় নতুন করে সংক্রমিত মানুষ শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মোট ১৩৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন বলে জানায়। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৮৭ হাজারের কিছু বেশি।
মেক্সিকোতে একদিনে ১০৯২ মৃত্যু : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনায় মেক্সিকোতে একদিনে রেকর্ড ১০৯২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার দেশটিতে রেকর্ড ৩ হাজার ৯১২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। করোনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর হিসাবে এদিন মেক্সিকো প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাপিয়ে যায়। বুধবার প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মার্কিন সরকার জানিয়েছে। মেক্সিকোতে এর আগে কোভিড-১৯ এ একদিনে সর্বোচ্চ ৫০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১০৮৩ মৃত্যু : যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ তিন হাজার ৮৬৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছে এক লাখ ৯ হাজার ১৭৬ জন। ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮১১ জন। সেখানে বর্তমানে করোনার এ্যাক্টিভ কেস ১১ লাখ ৫ হাজার ৮৮১। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ১৬ হাজার ৯৩৯ জন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৯ হাজার ৬৯৯ জন। অপরদিকে মারা গেছেন ৯৯৫ জন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩০ হাজার ১৬৪ জন।
চীনকে ছাড়িয়ে গেল পাকিস্তান : পাকিস্তানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেই। আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮০১ জন। পাকিস্তানে করোনার প্রাদুর্ভাব অনেক পরে হলেও দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা চীনের চেয়েও বেশি। চীনে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ২২। অথচ পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ হাজার ২৬৪ জন। চীনের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা কম।
ব্রাজিলের ১৬ ফুটবলার করোনায় আক্রান্ত : প্রাণঘাতী করোনায় তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। ভাইরাসের থাবা পড়েছে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল অঙ্গনও। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে রাজধানী রিওডি জেনিরোতে অবস্থিত ব্রাজিলের প্রথম বিভাগের ক্লাব ভাস্কো দা গামার ১৬ ফুটবলার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট জানিয়েছে, করোনার কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ক্লাবটির ফুটবলাররা ঘরবন্দী হয়েছিলেন। সম্প্রতি খেলায় ফিরতে চাচ্ছিল ক্লাবটি। তাই নিয়মানুযায়ী, গত সপ্তাহে কোচসহ ২৫০ জনের করোনা পরীক্ষা করে ক্লাবটি। ওই নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের শরীরে কোভিড-১৯ পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। ভাস্কোর মেডিক্যাল ডিরেক্টর মার্কোস তেক্সেইরা এক ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, পরীক্ষার পর আমরা ১৬ খেলোয়াড়ের পজেটিভ পেয়েছি। রিপোর্ট হাতে আসার পর পরই ওই ১৬ জনকে দল থেকে আলাদা রাখা হয়েছে।