দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্য বলছে, নিকট-ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়েই খাদ্যশস্যের সরবরাহ বিঘিœত হতে পারে। বৈশ্বিক খাদ্যসংকটের জন্য প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে গমের সরবরাহ নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) গত সেপ্টেম্বরেই বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের আগাম সতর্কতা জারি করে।
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সেখানে উচ্চ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকা ৪৫টি দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০২২-এর সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম। আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ক্রপ প্রসপেক্টস অ্যান্ড ফুড সিচুয়েশন শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৫টি দেশে ঘাটতিজনিত উচ্চ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা রয়েছে। এই তালিকায় এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আবার আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং জার্মানভিত্তিক ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ যৌথভাবে প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (জিএইচআই) আট ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪-তে নেমে এসেছে। এই সূচকে বাংলাদেশ মাঝারি ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে বলা হয়েছে। তিন বছর ধরে এই সূচকে অবনমন হচ্ছে বাংলাদেশের। খাদ্যের মজুদ যথেষ্ট থাকার পরও বাংলাদেশ এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। সরকার এরই মধ্যে ওএমএস কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যদিকে চলছে টিসিবির কার্যক্রম। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে হতে পারে। কারণ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সব দেশেই খাদ্যসংকটের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যশস্য সংরক্ষণ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন করতে বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব উৎস থেকে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় নতুনভাবে কর্মপরিকল্পনা করছে। আগের চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত চাল পাওয়া নিশ্চিত করতে এবং আরো চাল আমদানির চুক্তি করার উদ্যোগ নিতে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফরে যাচ্ছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য আমদানির পাশাপাশি একই সঙ্গে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।